সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ১৪ মার্চ ২০২১
বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, বিয়ানীবাজার এবং শ্রীমংগলে বঙ্গবন্ধুর সফর
ছয়দফা দাবিতে যখন সারাদেশ উত্তাল তখন বঙ্গবন্ধু আসেন বিয়ানীবাজারে। ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধু যখন সারা দেশ সফর করছিলেন তখন তিনি আবার আসেন বিয়ানীবাজারে। সে সময় বঙ্গবন্ধু বিয়ানীবাজার সদর পোষ্ট অফিস মোড়ে জনসভায় ভাষন দেন। সেদিন তিনি বলেছিলেন- বিয়ানীবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে আমার মনে হচ্ছে এটি যেন বাংলার কাশ্মীর।
১৯৬৯ সালে মে মাসে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তিলাভ করার পর বঙ্গবন্ধু সারাদেশে গনসংযোগ করেন। তখন ছিল এহিয়া খানের মার্শাল’ ল। বঙ্গবন্ধু তখন সড়কপথে ঢাকা থেকে সিলেট যাওয়ার পথে হবিগঞ্জের মাধবপুরে যাত্রাবিরতি করেন। তখন মাধবপুর ডাকবাংলায় কিছুক্ষন তিনি বিশ্রাম নেন। তারপর তাঁর বিশেষ পরিচিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামী মাহবুব উদ্দিন চৌধুরী, মাওলানা আসাদ আলী ও আন্দিউড়া নিবাসী দুলাল চৌধুরী প্রমুখের সঙ্গে কিছুসময় মতবিনিময় করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চা-শ্রমিকদের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৭-৫৮ সালে তিনি চা-বোর্ডের প্রথম বাঙ্গালী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এসময় তিনি শ্রীমঙ্গলে চা-বাগান পরিদর্শনে আসেন। শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত চা-মিউজিয়ামে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত চেয়ার, টেবিল, খাট সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। যা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বহন কওে চলছে। ১৯৫৭ সালে চা-বোর্ডেও অধীন পাকিস্তান টি রিসার্চ স্টেশন বর্তমানে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট শ্রীমঙ্গলে প্রতিষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর সরাসরি হস্তক্ষেপে ও তৎপরতায় এ প্রতিষ্ঠানের নিমার্ণ কাজ দ্রæততার সাথে সম্পন্ন হয়। বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ সংগ্রামের ফলে চা শ্রমিকরা নাগরিকত্ব ও ভোটাধিকারপ্রাপ্ত হয়।
১৯৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে বঙ্গবন্ধু মুক্তি লাভ করার পর সারাদেশে গণসংযোগ করেন। সে সময় বঙ্গবন্ধু আবার আসেন শ্রীমঙ্গলে। বঙ্গবন্ধু আগমনের খবর শুনে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় ভিড় জমান বঙ্গবন্ধুকে সংবর্ধনা জানানোর জন্য। কথা ছিল বেলা ২ টায় আসবেন কিন্তু আসলেন রাত তিনটায়। শ্রীমঙ্গল শহর তখনও লোকে লোকারণ্য। মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় বঙ্গবন্ধু আপ্লুত হন। বঙ্গবন্ধু সে সময় উঠলেন আব্দুল আলী সাহেবের বাসায়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৯ সালের প্রথম মৌলভীবাজার এসেছিলেন। উঠেন শহরের বর্তমান শাহমোস্তোফা সড়কের ওয়াবদা রেষ্ট হাউসে। তাঁর আগমন ও আয়োজনের মূল ব্যবস্থাপক ছিলেন ওই সময়ের আওয়ামী লীগের সংগঠক মির্জা আজিজ আহমদ বেগ। চৌমুহনা টাউন দেওয়ানি জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় শেষে বিকেল আড়াইটার সময় স্থানীয় জনমিলন কেন্দ্রে মতবিনিময় ও পরিচিতি সভায় যোগ দেন। উনসত্তরের পর ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু আবারো মৌলভীবাজার আসেন। ১৯৭০ সালে সারাদেশে নির্বাচনী প্রচারের এক পর্যায়ে মৌলভীবাজারে এসে রাত্রি যাপন করেন বঙ্গবন্ধু। পরদিন কুলাউড়া জুড়ী বড়লেখা ও টেংরাবাজার জনসভা শেষে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে লক্ষাধিক জনতার সমাবেশে শেখ মুজিব পাকিস্তানের শোষনের ধারাবাহিক বিবরণ তুলে ধরেন। স্বাধীনতা পর ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু আবারো মৌলভীবাজার আসেন। তখনোও সরকারি স্কুল মাঠে বক্তৃতা রাখেন। সে দিন স্কুলের মাঠ সহ চার দিকের রাস্তাঘাট, দোকানের চাল, গাছের ঢাল সর্বত্র কেবল মানুষ আর মানুষ।
তথ্যসূত্রঃ সিলেটের জনপদ