সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ৩rd ডিসেম্বর ২০২০
বঙ্গবন্ধুর দিনাজপুর ভিজিট
১৯৫২ সালের ১৭ আগস্ট রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে দিনাজপুর জেলা সফর করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। ঐ বছরের ৮ আগস্ট বগুড়া জেলার মতিউসডল্লা গ্রাম নিবাসী আব্দুল আজিজ কবিরাজকে উত্তরবঙ্গ সফরের বিষয় নিয়ে একটি চিঠি লিখেন তিনি। ঐ চিঠিতে উত্তরবঙ্গ সফরের সুনির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করে লিখেছিলেন যে, তিনি উত্তরবঙ্গ সফরকালে দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দেশবাসীর সামনে তুলে ধরবেন। চিঠির নিচের দিকে বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুরসহ কয়েকটি জেলা সফরের সুনির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করে দিয়েছিলেন। ১৬ আগস্ট (১৯৫২) রংপুরে মিডনাইট কনভেনশন করবেন এবং ১৭ আগস্ট দুপুর ১১.৪৫টায় দিনাজপুরে পৌঁছাবেন। দিনাজপুরে এসে মিটিং করে ১৭ আগস্টেই দিনাজপুর ত্যাগ করে বগুড়ার দিকে যাবেন, এইসব লেখা ছিল চিঠিতে (বঙ্গবন্ধুর অপ্রকাশিত চিঠিপত্র, সম্পাদনা ড. সুনীল কান্তি দে, পৃষ্ঠা-৬৯)। বঙ্গবন্ধুর লেখা 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'সহ বিভিন্ন সূত্র থেকে ধারণা করা যায় যে, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পর তিনি জেল থেকে মুক্ত হয়ে দিনাজপুরে এসে সাংগঠনিক কর্ম চালিয়েছেন। 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'র ২৩৫ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন, 'আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠানকে গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করলাম। সোহরাওয়ার্দী সাহেবকে খবর দিলাম পূর্ব বাংলায় আসবার জন্য। তিনি আমাকে পূর্বেই কথা দিয়েছিলেন এক মাস সমস্ত প্রদেশ ঘুরবেন এবং জনসভায় বক্তৃতা করবেন। আমি প্রোগ্রাম করে তাকে জানালাম। সমস্ত জেলা হেড কোয়ার্টারে একটা করে সভা হবে এবং বড় বড় কতোগুলি মহকুমায়ও সভার বন্দোবস্ত করা হলো। তিনি ঢাকায় আসলেন, ঢাকার জনসভায় বক্তৃতা করলেন। পাকিস্তান হওয়ার পর বিরোধী দলের এতো বড় সভা আর হয় নাই। তিনি পরিষ্কার ভাষায় রাষ্ট্রভাষা বাংলা, বন্দীমুক্তি, স্বায়ত্তশাসনের সমর্থনে বক্তৃতা করলেন। সিলেট থেকে শুরু করে দিনাজপুর এবং বগুড়া থেকে বরিশাল প্রত্যেকটা জেলায়ই আওয়ামী লীগ কর্মীরা সভার আয়োজন করেছিল।'
১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গবন্ধু যখন দিনাজপুরে আসেন, তখন সম্ভবত এই জেলায় আওয়ামী লীগের কমিটি ছিল না। তিনি জনসভা শেষে রাতের বেলা লিলি মোড় এলাকায় রহিমুদ্দিন আহমেদের বাসভবনে (ফাতেমা বিথি) বসেন এবং কর্মীদের সাথে আলোচনা করে দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করেন। কমিটিতে সভাপতি রহিমুদ্দিন আহমেদ (লিলিমোড়) এবং সাধারণ সম্পাদক এড. আব্দুর রহমান চৌধুরী (কালিতলা), সহসভাপতি ডা. নাইমুদ্দিন আহমেদ (ষষ্টিতলা), এড. আজিজুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক হবিবর রহমান (হবিব চেয়ারম্যান হিসেবে খ্যাত), প্রচার সম্পাদক আমিনউদ্দিন আহমেদ (বালুবাড়ি) নির্বাচিত অথবা মনোনীত হয়েছিলেন। কমিটি গঠনের এই বিষয়টি অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে উল্লেখ করা হয়েছে এভাবে, 'আতাউর রহমান সাহেব ও আমি পাবনা, বগুড়া, রংপুর ও দিনাজপুরে প্রোগ্রাম করলাম। নাটোর ও নওগাঁয় কমিটি করতে পেরেছিলাম, কিন্তু রাজশাহীতে তখনও কিছু করতে পারি নাই। দিনাজপুরে সভা করলাম, সেদিন বৃষ্টি ছিল। তাই লোক বেশি হয় নাই। রাতে এক কর্মিসভা করে রহিমুদ্দিন সাহেবের নেতৃত্বে একটা জেলা কমিটি করলাম। এইভাবে বিভিন্ন জেলায় কমিটি করতে পারলাম। কিন্তু রাজশাহীতে পারলাম না। পাবনায়ও কেউ এগিয়ে আসল না।'
বঙ্গবন্ধু ১৯৫২ সালে যাদেরকে নিয়ে দিনাজপুরে কমিটি করেন তাদের মধ্যে বেশ ক'জন পরবর্তীতে তার রাজনীতির বিপক্ষে অবস্থান নেয়। তিনি ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের স্বায়ত্তশাসনের দাবিসহ ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেছিলেন । কিন্তু ৬ দফার সাথে একমত ছিলেন না রহিমউদ্দিন আহমেদ ও আব্দুর রহমান চৌধুরী। তারা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগ ছেড়ে পিডিবি'তে যোগ দিয়েছিলেন।