১৯৫৪ সালের মে মাসে  সকাল ৯টা লাটভবনে বঙ্গবন্ধু প্রাদেশিক যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। বঙ্গবন্ধুর যখন মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়া শেষ হলো, ঠিক সেই সময় খবর এল আদমজী জুট মেলে বাঙালি ও অবাঙালি শ্রমিকদের ভীষণ দাঙাহাঙামা শুরু হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বলেন, আমরা যখন শপথ নিচ্ছ ঠিক সেই মুহুর্তে দাঙা শুরুর কারণ কি? বুঝতে বাকি রইল না, এ এক অশুভ লক্ষণ। বঙ্গবন্ধু সেখানে ছুটে গেলেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত বিপদের ঝুঁকি নিয়ে বঙ্গবন্ধু সেখানে দাঙা বন্ধের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। সেখানে মন্ত্রী সৈয়দ আজিজুল হক সাহেবও গিয়েছিলেন কিন্তু তিনি মিলের ভিতর বসে ছিলেন। তার কোন খবর নেই যে দাঙা মিলের অন্যদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। হক সাহেব এবং অন্যান্য মন্ত্রীরা ঢাকায় চলে এসেছেন। বঙ্গবন্ধু মোহন মিয়া সহ রাত ৯টা পর্যন্ত এই বিপদের মধ্যে সাধ্যমতো আপ্রাণ কাজ করেছেন দাঙা বন্ধের জন্য।  সন্ধ্যার দিকে গুনে দেখলেন  প্রায় ৫০০ লোক দাঙায় মারা গেছে। তুচ্ছ ঘটনা কে কেন্দ্র করে এই দাঙা লাগানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বলেন, এই দাঙা যে যুক্তফ্রন্ট সরকারেকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এবং দুনিয়াকে নতুন সরকারের অক্ষমতাকে দেখাবার জন্য বিরাট এক ষড়যন্ত্রের অংশ সে সম্বন্ধে আমার মনে কোন সন্দেহ নাই। কয়েকদিন পূর্বে এই ষড়যন্ত্র করচি থেকে করা হয়েছিল এবং এর সাথে মিলের একজন সরকারি কর্মচারি এবং মিলের কোন কোন কর্মচারী জড়িত ছিল। কেন্দ্রীয় মুসলিম সরকার মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে যে সুযোগ খুজতে ছিল এই দাঙায় তা সৃষ্টি করতে সক্ষম হলে। মোহাম্মদ আলী মুসলিম লীগ ও পশ্চিমা শিল্পপতিদের যোগসাজশে যে যুক্তফ্রন্টকে ভাঙতে চেষ্টা করেছিল আওয়ামী লীগ মন্ত্রিসভায় যোগদান করায় তা সফল হল না। যা হোক পরের দিন দফতর ভাগ করা হলো। বঙ্গবন্ধু পেলেন ‘কো-অপারেটিভ ও এগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্ট এর দফতর।

তথ্যসূত্রঃ অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান