বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবদ্দশায় প্রথম বিশাল জনসভায় বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা টাউন হল মাঠে ১৯৭০ সালের ২৩ জানুয়ারি। এটি বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার জনসভা হিসেবে সমাদৃত। সর্বশেষ ১৯৭২ সালের ৬ জুলাই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কুমিল্লায় বঙ্গবন্ধুর একমাত্র জনসভাটি হয় কুমিল্লার হাউজিং এষ্টেট এলাকায় কেটিসিসিএ লিমিটেডের সামনে। এই দুইটি বড় জনসভা আর সেনানিবাসে সামরিক একাডেমির প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণ শেষে সমাপনী অনুষ্ঠানে ও কুমিল্লার পুলিশ লাইনের প্যারেডে অংশ নেয়া ছাড়াও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কুমিল্লায় অগণিত পথসভায় বক্তব্য রাখেন। এ সব পথসভায় অনেকগুলোই জনসভায় রূপ নেয়।
চট্টগ্রামে ৬ দফা ঘোষণার পর ঢাকা যাওয়ার পথে কুমিল্লার চৌয়ারাতেও পথসভায় বক্তব্য রাখেন। পথসভাটিতে এতো বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগম ঘটে যে তা জনসভায় রূপ নেয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কুমিল্লায় সব মিলিয়ে কতবার এসেছেন তার পরিসংখ্যান দেয়াও কঠিন এবং অসম্ভব। কেননা ঢাকা থেকে সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম অঞ্চলে আসা যাওয়ার পথে প্রায়ই তিনি কুমিল্লায় অবস্থান করতেন। বিশেষ করে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে সে সময় তিনটি ফেরি থাকায় এবং রাত ১০টায় ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার সময় হলে তিনি কুমিল্লায় থেকে যেতেন। আর বেশিরভাগ সময় তিনি উঠতেন কুমিল্লা শহরের রেইসকোর্সে কুমিল্লা জেলা আওয়ামীলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আহমেদ আলীর বাসায়।
১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি কুমিল্লা সেনানিবাসে বাংলাদেশ সামরিক একাডেমির প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণ শেষে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বঙ্গবন্ধু উপস্থিত ছিলেন। এতে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ আজ স্বাধীন স্বার্বভৌম রাষ্ট্র। সেই জন্যেই আজ বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি স্থাপিত হয়েছে। আমি স্মরণ করি সেই সমস্ত শহীদ ভাইদের- যারা স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়েছে, আত্মাহুতি দিয়েছে। আমি স্মরণ করি, বাংলার ৩০ লক্ষ লোক রক্ত দিয়ে বাংলার স্বাধীনতা এনেছে। আজ সত্যিই গর্বে আমার বুক ভরে যায় এই জন্যেই-বাংলাদেশের মালিক আজ বাংলাদেশের জনসাধারণ। সেই জন্যেই সম্ভব হয়েছে আজ আমার নিজের মাটিতে একাডেমি করা।