ছয় দফা কর্মসূচি জনসভার মাধ্যমে প্রথম প্রচার হয়েছিল চট্টগ্রাম থেকে এবং তা এখানকার নেতা-কর্মীদের ওপর বঙ্গবন্ধুর আস্থা ও একান্ত আগ্রহের কারণে। ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু লাহোরে ছয় দফা ঘোষণা করলে বিভিন্ন মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। আইউব খানের সামরিক সরকার ও আওয়ামী লীগ বিরোধী মহল তো বটে, আওয়ামী লীগের ভেতরের বড় একটি অংশও ছয় দফার বিরোধিতা করতে থাকেন। এ অবস্থায় বঙ্গবন্ধু পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ঢাকায় ফিরে আসেন ১১ ফেব্রুয়ারি। ঢাকায় ছয় দফার বিরোধিতার মুখে বঙ্গবন্ধুর সমর্থনে প্রথম এগিয়ে আসেন চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে ছয় দফাকে সমর্থন করে প্রথম বিবৃতি দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ আজিজ, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ আল হারুন চৌধুরী, এম এ হান্নান, জানে আলম দোভাষ, আবুল কাসেম সাব জজ প্রমুখ যা ১৩ ফেব্রুয়ারি দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত হয়। পরের দিন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটিও ছয় দফার সমর্থনে বিবৃতি দেয়। এই ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু সিদ্ধান্ত নেন, চট্টগ্রামে জনসভার মাধ্যমে তিনি ৬ দফা ঘোষণা করবেন।
১৯৬৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ঐতিহাসিক লালদিঘি মাঠে বাঙালির মুক্তিসনদ ৬ দফা কর্মসূচির বিস্তারিত আনুষ্ঠানিক জনসভার মাধ্যমে ঘোষণা করেন বঙ্গশার্দুল শেখ মুজিবুর রহমান।
ঐদিন সকালে উল্কাযোগে চট্টগ্রামের বটতলী রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছেন বঙ্গবন্ধু। সেখানে সংবর্ধনা শেষে তাঁকে স্টেশন রোডে অবস্থিত সড়ক ও জনপথ বিভাগের মালিকানাধীন রেস্ট হাউসে নিয়ে আসেন তৎকালীন আওয়ামী লীগের দুই অদম্য কর্মী ইদরিস আলম ও শাহ বদিউল আলম। ওই রেস্ট হাউস পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্ন না থাকা এবং টেলিফোন সংযোগ না থাকায় ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে সদরঘাটে হোটেল শাহজাহানে অবস্থান করেন বঙ্গবন্ধু।
তথ্যসূত্র: মুহাম্মদ শামসুল হক, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণাকর্মী, সম্পাদক-ইতিহাসের খসড়া।