সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ১st মার্চ ২০২০
লালমনিরহাট জেলা
ক) ঐতিহাসিক, প্রত্নতাত্ত্বিক ও স্থাপত্য নিদর্শন
পর্যটন আকর্ষণের নাম ও বর্ণনা
সিন্দুরমতি দীঘিঃ
সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নে ১৬ একর ৫ শতক আয়তন বিশিষ্ট এ দীঘি অবস্থিত। দীঘিটি হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের কাছে একটি তীর্থ স্থান। জনশ্র“তি আছে যে শ্রীলংকা থেকে আগত জনৈক রাজনারায়ণ চক্রবর্তী সন্তান লাভের বাসনায় এই দীঘি খনন করান। তাঁর দুই কন্যাসন্তান হলে তিনি নাম রাখেন সিন্দুর ও মতি । কিন্তু দীঘি খনন হলে দেখা যায় তাতে পানি উঠছে না। স্বপ্নাদেশ প্রাপ্ত হয়ে জমিদার নবমীর দিনে খননকৃত দীঘির ঠিক মাঝখানে পূজার আয়োজন করেন। পূজা সমাপ্ত হওয়ার আগেই হঠাৎ করে প্রবলবেগে পানি উঠে দীঘি ভরে যায় এবং সিন্দুর ও মতি ঐ পানিতে ডুবে মারা যায়। সিন্দুর ও মতি নামানুসারে দীঘিটিসহ এলাকাটির নাম হয়েছে সিন্দুর মতি।
তুষভান্ডার জমিদারবাড়িঃ
লালমনিরহাট জেলা সদর থেকে ২৫ কিঃমিঃ পশ্চিমে কালীগঞ্জ উপজেলার ঘনশ্যাম মৌজায় এ জমিদারবাড়ি অবস্থিত।তুষারভান্ডার জমিদারদের মধ্যে সবচেয়ে প্রতাপশালী ছিলেন রমনী মোহন রায়। তাঁর অনেক কীর্তির মধ্যে তাঁর মায়ের নামে নির্মিত কালীমন্দিরটি এখনও অক্ষত অবস্থায় টিকে আছে। জমিদার বাড়ির সিংহ দুয়ার ছাড়া প্রায় সব ভবনই বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত ।
খ) ধর্মীয়
পর্যটন আকর্ষণের নাম ও বর্ণনা
নিদাড়িয়া মসজিদঃ
লালমনিরহাট জেলায় প্রাচীন মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের একটি অপূর্ব নিদর্শন এই নিদাড়িয়া মসজিদ। মোগল আমলে নির্মিত এ মসজিদটি রংপুর-কুড়িগ্রাম সড়ক থেকে প্রায় ২ কিঃমিঃ দক্ষিণে সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নে অবস্থিত। জনশ্রুতি রয়েছে যে, ১১৭৬ হিজরীতে মোগল সুবেদার মাসুদ খাঁ ও তারপুত্র মনসুর খাঁর তত্ত্বাবধানে এ মসজিদ নির্মিত হয়েছিল। ইট ও চুন-সুরকি দিয়ে নির্মিত তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি দৈর্ঘ্যে ৪২ ফুট ও প্রস্থে ১৬ ফুট । মসজিদটিতে ছোট-বড় মোট ১২টি মিনার রয়েছে। মসজিদটি মোগল স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত।
কালিবাড়ি মন্দির ও মসজিদঃ
বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনবদ্য নিদর্শন এই কালিবাড়ি মন্দির ও মসজিদ। উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে কেদার মাহেশ্বরী নামে জনৈক মারোয়ারীর মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। এবং বাংলা ১৩০৭ সালে জনৈক আসানউল্লাহ মন্দিরের পার্শ্বে মসজিদটি নির্মাণ করেন। মন্দির ও মসজিদ প্রতিষ্ঠার পর থেকে উভয় সম্প্রদায়ের অনুসারীগণ তা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মাধ্যমে ব্যবহার করে আসছে।
তেলীপাড়া কালীমন্দিরঃ
লালমনিরহাট সদর উপজেলা থেকে ৫ কিঃমিঃ দক্ষিন-পূর্বে মহেন্দ্র নগর ইউনিয়নের তেলীপাড়া মৌজায় অবস্থিত ছোট এই কালীমন্দিরটি প্রায় দুইশত বছর পুরাতন। একটি বিশাল বটগাছ মন্দিরটিকে এমনভাবে ঢেকে ফেলেছে যে শুধু কালীমূর্তির সামনে ত্রিকোণাকৃতির একটি ছোট দরজা প্রাকৃতিকভাবেই তৈরী হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত কারণে এই বটগাছটিতে সারাদিন ঝুলে থাকে অসংখ্য বাদুড় যা দর্শনার্থীদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করে।
গ) সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক
পর্যটন আকর্ষণের নাম ও বর্ণনা
কবি শেখ ফজলুল কবির স্মৃতি জাদুঘরঃ
কবি শেখ ফজলুল কবির ১৮৮৩ সালে লালমনিরহাট জেলার কাকিনায় জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর লেখা অনেক কবিতা কলকাতা থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন নাম করা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর লিখিত উলে-খযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে সরল পদ্যবিকাশ, রত্নপ্রদীপ, তৃষ্ণা, পরিত্রাণ, ভগ্নবীণা ইত্যাদি। কাব্য ক্ষেত্রে তাঁর অনন্য সাধারণ অবদানের জন্য তিনি কাকিনার জমিদার কর্তৃক “কাব্যরত্নকার নীতিভূষণ” খেতাব প্রাপ্ত হয়েছিলেন। কবির সমাধি তারঁ নিজ বাসভবনের সামনে অবস্থিত। বর্তমানে কবি ভবনে তাঁর ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী সংরক্ষণ করে একটি স্মৃতি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
ঘ) উৎসব সম্পর্কিত
পর্যটন আকর্ষণের নাম ও বর্ণনা
সিন্দুর মতির মেলাঃ
প্রতি বছর চৈত্রমাসের রাম-নবমীতে সিন্দুরমতি পূজা উপলক্ষে এই দীঘির পাড়ে বিরাট মেলা বসে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও ভারত থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পূণ্যার্থীর আগমনে এলাকাটি জাঁকজমকপূর্ণ হয়ে ওঠে।
ঙ) প্রাকৃতিক
পর্যটন আকর্ষণের নাম ও বর্ণনা
সুকান দীঘিঃ
লালমনিরহাট উপজেলা সদর থেকে ৬ কিঃমিঃ দুরে গোকুন্ডা ইউনিয়নে এই দীঘি অবস্থিত। প্রজাদের জলকষ্ট দেখে মিথিলার রাজা এ দীঘি খনন করান। মনোরম এই দীঘির আয়তন ৪৯.৪০ একর।
তিন বিঘা করিডোরঃ
লালমনিরহাট জেলার কুচলিবাড়ি ইউনিয়নের পানবাড়ি সীমান্ত থেকে অনতিদূরে এ করিডোরের অবস্থান। ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ছিটমহল দহগ্রাম ও আঙ্গোরপোতায় প্রবেশের জন্য এ করিডোর ব্যবহৃত হয়। মূল ভূখন্ডের সাথে দুটি ছিটমহলের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এ করিডোর ভারত কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। ১৯৭৪ সালের ইন্দিরা-মুজিব চুক্তির পরে ২০০১ সালে এ করিডোর বাংলাদেশীদের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।