ক. ঐতিহাসিক, প্রত্নতাত্ত্বিক ও স্থাপত্য নিদর্শনঃ
১. প্রাচীন আমলের তৈরী ইমারতের ধ্বংসাবশেষঃ
নবীনগর উপজেলার অধীনে বিলকেন্দুআই নামক গ্রামে প্রাচীন মজে যাওয়া জলাশয়ের সংগে সংযুক্ত একটু উচু ভূমি বর্তমানে মুসলমানদের কবরস্থান হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কবরের জন্য মাঠ খননকালে এখান থেকে প্রাচীন ইট, মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশ, স্বর্ন ও রৌপ্যের অলংকার এবং প্রাচীরের ধ্বংশাবশেষ আবিস্কৃত হয়েছিল যা প্রাচীন আমলে তৈরী ইমারতের ধ্বংসাবশেষ অথবা ফরেকাট বৌদ্ধ স্তুপের ধ্বংসবশেষ বলে গন্য।
২. দেবগ্রামের বৌদ্ধ সভ্যতার নিদর্শনঃ
আখাউড়া উপজেলার দেব গ্রামে অবস্থিত কুমিল্লার লালমাই-ময়নামতির বৌদ্দ বিহার স্তুপ ও মন্দিরের মতো অনেক ইমারতাদির ভগ্নাংশেষ বিদ্যমান।
৩. চম্পকনগরঃ
জায়গাটি বাংলাদেশ ও ভারতের প্রায় সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত পাবর্ত্য ত্রিপুরা রাজ্যের কাছাকাছি স্থানে অবস্থিত। বেশ কয়েকটি ঢিবির অবস্থানের কারনেই এ স্থানকে পাহাড় এলাকা মনে হয়। বেশীরভাগ ঢিবিতে প্রাচীন ইট, মৃতপাত্রর ভগ্নাংশ ইত্যাদি প্রত্নতত্ত্ব প্রচুর পরিমানে বিদ্যমান।
খ. ধর্মীয়ঃ
১. সরাইলের প্রাচীন মসজিদ ও দীঘিঃ
সরাইল বাজারের প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত দুইটি প্রাচীন দীঘি ও মোগলাই দীঘির মাঝখানে আরিফাইল মসজিদের অবস্থান। আয়তাকার বিশিষ্ট এই মসজিদের চারকোনে আছে ৪টি মিনার এবং দেয়ালগুলোর বহিপৃষ্ঠে সারিবদ্দভাবে আয়তাকার খোপ রয়েছে। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটির স্থাপত্য ও কলাকৌশলে প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিকগন এটি মোগল যুগের মাঝামাঝির সময়ে নির্মিত বলে অভিহিত করেছেন। মসজিদের দক্ষিন পাশে রয়েছে একটি সমাধি সৌধ, এর অভ্যন্তরে রয়েছে জোড়া কবর আর কবরের নীচে পাকা সুড়ঙ্গ দৃশ্যমান। আরিফাইল মসজিদ ও মাজারকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষনা করেছে। কয়েকশ বছরের পুরানো আরিকাইল মসজিদে এখনও পাঞ্জেগানা আজান এবং নামাজ হয়।
২. ভাদুঘর প্রামের প্রাচীন মসজিদঃ
কোতায়ালী উপজেলার রেললাইনের সামান্য পুর্বদিকে ভাদুঘর মসজিদ অবস্থিত। এক গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটি সম্রাট আলমগীরের রাজত্বকালে জনৈক নূর মোহাম্মদ ১৬৫৭-১৬৫৮ সনে নির্মাণ করেন। অষ্টকোনাকৃতির মিনারটারেট সম্বলিত এই মসজিদের ভিতরে পশ্চিম দেয়ালে রয়েছে তিনটি মিহরাব। মিহরাবগুলি এক সময়ে মনোরমভাবে অলংকৃত থাকলেও অত্যাধিক সংস্কার ও পলেস্তারের ফলে অলংকরন অনেকটা স্তিমিত হয়ে গেছে। বর্তমানে এটি শাহী মসজিদ হিসাবে স্থানীয়ভাবে অধিক পরিচিত।
৩. নাটঘরের বিচিত্র শিবমূর্তিঃ
নবীনগর উপজেলার পূর্বাঞ্চলে তিতাস নদীর তীরের নিম্নাঞ্চলে অবস্থিত নাট গ্রামে ব্রিটিশ আমলের প্রথম দিকে চৌধুরী বাড়ীর একটি মজে যাওয়া প্রাচীন জলাশয় পুনর্খননকালে কাল প্রস্তর নির্মিত একটি অদ্ভুত শিবমূর্তি আবিস্কৃত হয়। প্রায় ৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট নদীর উপরে স্থাপিত এ মূর্তির সম্মুখের দুহাত দিয়া মুখের মধ্যে একটি মকর আকৃতির বাঁশরি ধৃত এবং সামনের দুটি হাত ছাড়াও মূর্তির পিছন দিকের প্রত্যেক পাশে আরও পাঁচটি করে হাত বিদ্যমান। এ শিবমূর্তিটিতে শ্রীকৃষ্ণের বাঁশরি ও বিঞ্চুর সুদর্শন চক্রের উপস্থিতি মূর্তিটির বৈশিষ্ট প্রমান করে। এ ধরনের মূর্তি এই উপমহাদেশে অত্যন্ত বিরল এবং এটিকে প্রাক-বৌদ্ধ যুগের মূর্তি বলে মনে করা হয়।
৪.বিঞ্চুমূর্তিঃ
সরাইল উপজেলার কালীকাছ গ্রামে প্রায় ৫ মন (১৮৫ কিলোগ্রাম) ওজনের প্রস্তর নির্মিত একটি নারায়ন (বিঞ্চু) মূর্তি আছে। বৃক্ষলতা শোভিত এ মূর্তির দুপাশে রয়েছে লক্ষী ও সরশ্বর্তীর মূর্তি।
৫. কালভৈরব মন্দিরঃ
ব্রাহ্মনবাড়িয়া শহরের উত্তরাংশে মেড়ডার কাল ভৈরব মন্দির ও বিরাটাকার কালভৈরব মূর্তি একটি উল্লেখযোগ্য র্কীতি। আদি মন্দির নির্মাণকালে সরাইলের তৃতীয় দিওয়ান নূর মোহাম্মদ মন্দির নির্মাণের জন্য প্রচুর ভূমি দান করেছিলেন। ১৯৭১ সালে পাকহানাদার কর্তৃক মূর্তি ও মন্দিরটির ধ্বংস সাধিত হয়। বর্তমানে মন্দিরটি সংস্কার করে সেখানে মাটির তৈরী নতুন মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে।
৬. উলচাপাড়া মসজিদঃ
ব্রাহ্মনবাড়িয়া শহরের দক্ষিন-পশ্চিম পাশে উলচাপড়া গ্রামে অবস্থিত এ মসজিদটি ১৭১৭-২৮ সনে নির্মিত। উচুঁ একটি বেদীর পশ্চিম প্রান্তদেশে নির্মিত এই মসজিদের সামনের দিকে আছে একটি প্রাঙ্গন এবং প্রাঙ্গনের দক্ষিনে অবস্থিত মাঝারী আয়তনের সুন্দর পুকুর সৃষ্টি করেছে মনোরম পরিবেশ। আয়তাকার তিনতারকা তিনগম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদের সামনে দেয়ালে আছে সুন্দর অলংকরণ। সরলভাবে নির্মিত প্যারাপেট দ্বারা সুশোভিত। এমন স্থাপত্যকৌশল অন্যকোন মসজিদে দেখা যায় না। বর্তমানে এটিকে সরকার ইতিহাসের অংশ হিসাবেই সংরক্ষণ করছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এ মসজিদকে সংরক্ষিত পুরার্কীতি হিসেবে গন্য করলেও বাজেট স্বল্পতার কারণে সংস্কার বা পুনঃনির্মান করা সম্ভবপর হয়ে উঠেনি।