Wellcome to National Portal
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

গোপালগঞ্জ জেলা

ক) ঐতিহাসিক, প্রত্নতাত্ত্বিক ও স্থাপত্যঃ পর্যটন আকর্ষণঃ 


১। বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধঃ
গোপালগঞ্জ শহর থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজার। টুঙ্গিপাড়া নির্জন নিরিবিলি এক উপজেলা শহর। জেলা শহর থেকে সড়কপথে দূরত্ব মাত্র ১৯ কি. মি.। ভেতরে একটি চত্বর ঘিরে ক্যাফেটেরিয়া, সুরম্য মসজিদ, লাইব্রেরী ও কিছু দোকানপাট রয়েছে । এগুলো পেরিয়ে দু’পাশে বাগানের মাঝে পাকা সরু পায়ে চলাপথ। সোজা উত্তর-পশ্চিম দিকে ২০০ মি. লম্বা। মাঝামাঝি অংশে হাতের বামে একটি পাকা ঘাটওয়ালা পুকুর পড়বে। দেখা যাবে নানান ধরণের গাছ। এর মধ্যে হিজল ও তমাল আকর্ষণীয়। রাস্তাটির শেষ প্রান্তে মূল সমাধিসৌধ। তার আগে একটি ফোয়ারা। বর্গাকার এক-কোঠা বিশিষ্ট সমাধি ভবন। ভেতরে চমৎকার মর্মর পাথরের টাইলস্ বিছানো পাশাপাশি তিনটি কবর। পুর্বদিকেরটিতে বঙ্গবন্ধুর মরদেহ সমাহিত আছে। এ অংশের বহিরাবরণ হিসেবে সাদা রঙের মার্বেল, গ্রানাইট ও স্বচ্ছ কাচ ব্যবহার করা হয়েছে। চারদিকে খিলানকার জানালাগুলো জালি দিয়ে বন্ধ। ছাদে রয়েছে আধা চাঁদের আকৃতির গম্বুজ। পূর্বদিকে রয়েছে প্রবেশ দরজা।


২। বঙ্গবন্ধৃর বাড়ীঃ
সমাধি’র পশ্চিমে বঙ্গবন্ধু পরিবারের তিনতলা ভবন। পরিবারের সদস্যদের বা অতিথিদের পরিদর্শনের প্রয়োজন হলে খুলে দেয়া হয়। বৈকুন্ঠ বাবু দেখভাল করেন। আশেপাশে জেলা পরিষদের তিনটি ডাকবাংলো এবং হোটেল মধুমতি নামে পর্যটন করপোরেশনের একটি হোটেল আছে। ৩। একাত্তরের বধ্যভূমি/জয়বাংলা বধ্যভূমিঃ একাত্তরের বধ্যভূমি অর্থাৎ জয়বাংলা বধ্যভূমি শহরের একপ্রান্তে উপজেলা পরিষদের পাশে অবস্থিত। গোপালগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও জনসাধারণকে ধরে এনে হানাদারবাহিনী ক্যান্টনমেন্ট সংলগ্ন পুকুরের পাশে বিভিন্নভাবে পাশবিক ও শারীরিক নির্যাতন করার পর গুলি করে হত্যা করতো। এ পুকুরটি ‘জয়বাংলা পুকুর’ নামে পরিচিত। এ পুকুরের আশেপাশে মুক্তিযুদ্ধের অনেক জানা-অজানা শহীদের গণকবর রয়েছে। পরবর্তী সময়ে পুকুরটি ভরাট করে এখানে শহীদদের স্মৃতিরক্ষার্থে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। এটিই একাত্তরের বধ্যভূমি/জয়বাংলা বধ্যভূমি নামে পরিচিত।


৪। কবি সুকান্তের পৈতৃক ভিটাঃ
চন্দ্রবর্মণকোট, কবি সুকান্তের পৈত্রিক ভিটা গোপালগঞ্জ জেলা সদর থেকে ২৪ কি.মি. উত্তরে কোটালীপাড়া উপজেলা সদরে এর অবস্থান। বর্তমানে বিধ্বস্ত প্রায় চন্দ্রবর্মণকোট শহরটিতে অতীতে দু’টি অংশ ছিল। প্রথমটি মূল দূর্গনগর ও দ্বিতীয়টি উপশহর। বিস্মৃতির অতল তলে হারিয়ে যাওয়া চন্দ্রবর্মণকোটে অতীতে যেসব ইমারতাদি ছিল সেসবের কোন চিহ্ন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। কারণ, বছরের বেশিরভাগ সময়ই এর অভ্যন্তরভাগ পানির নিচে ডুবে থাকে। ভেতর এবং বাইরের কোনো কোনো স্থানে নতুনভাবে মাটি ভরাট করে বসত ভিটা তৈরি করা হয়েছে। এর নতুন বসতি বর্তমানে সিকিরবাজার, রতলি, পঁচাপাড়া, পাড়কোনা, আমতলি, মনসাবাড়ি ইত্যাদি নামে পরিচিত। দূর্গ মধ্যস্থিত একটি ভিটি কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের পিতৃ-পুরুষদের বসতভিটার চিহ্ন ধারণ করে আছে।

খ) ধর্মীয় : পর্যটন আকর্ষণ: 

১। কেন্দ্রীয় মসজিদঃ
গোপালগঞ্জ জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত জেলার কেন্দ্রীয় মসজিদ। এ মসজিদে একটি সুউচ্চ মিনার রয়েছে। তাছাড়া রয়েছে একটি সুদৃশ্য বড় গম্বুজ ও দুটি ছোট গম্বুজ। এ মসজিদটির স্থাপত্যশৈলী দৃষ্টিনন্দনও বটে।


২। সেন্ট মথুরানাথ এজি চার্চঃ
১৮৭৫ সালে খ্রিস্টান ধর্মালম্বীদের জন্য তৈরি করা হয় মথুরানাথ চার্চ। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মথুরারাথ বোস। তিনি ১৯০১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ছিলেন তদনীন্তন সমাজের একজন বরেণ্য ব্যক্তিত্ব।
বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সংলগ্ন উত্তরপাশে তাঁর সমাধির অবস্থান। সমাধিটির পাশে তাঁর স্ত্রীর সমাধিও রয়েছে। চার্চটি দেখার মতো। 


৩। থানাপাড়া মসজিদঃ
এটি গোপালগঞ্জ জেলা শহরের প্রথম মসজিদ। ১৯২০ থেকে ১৯২১ সালের মধ্যে এটি নির্মাণ করা হয়। খেলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনের সময় থানাপাড়া মসজিদ ছিল এ এলাকার মুসলমানের
মিলনকেন্দ্র।


৪। শিকদার বাড়ী জামে মসজিদঃ
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা কোটালিপাড়ার পিঞ্জরী ইউনিয়নের শিকদারবাড়িতে রয়েছে বহুতলা জামে মসজিদ। এটি আনুমানিক পঞ্চদশ শতকে নির্মিত হয়। তিনটি গম্বুজ রয়েছে এ মসজিদে। মসজিদটির নির্মাণশৈলী খুব আকর্ষণীয়। এটি প্রাচীন মুসলিম স্থাপত্যকলার এক অনন্য নিদর্শন।


৫। শিবমন্দিরঃ
এটি সিদ্ধান্তবাড়ি নামক স্থানে অবস্থিত। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত স্থানীয় লোকদের কাছে এটি ‘পুড়া ঠাকুর’ মন্দির নামে অধিক পরিচিত। প্রায় ২০০ বছর ধরে চৈত্র মাসের ২৯ তারিখে এখানে নিয়মিত চৈত্র
সংক্রান্তির মেলা হয়।

গ) বিনোদনমূলকঃ পর্যটন আকর্ষণঃ


বাবুর খালে বাঘিয়ার বাইচঃ
গোপালগঞ্জ জেলার কোটলিীপাড়া উপজেলার কালিগঞ্জ বাজার সংলগ্ন বাবুর খালের দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তিনদিনব্যাপী এই নৌকাবাইচ আর মেলা প্রায় ২০০ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বাঘিয়ার বাইচ নামে খ্যাত এ মেলা এবং নৌকাবাইচের উৎসব অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। আবহমান গ্রামবাংলার অতি প্রাচীন কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও নিজস্বতা ধরে রাখতে লাখো প্রাণের আনন্দ উচ্ছলতায় এ অনুষ্ঠানটি পালিত হয়।

ঘ) উৎসবঃ পর্যটন আকর্ষণঃ

১। বারুনীর মেলাঃ
গোপালগঞ্জ জেলা থেকে কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি গ্রামের ঠাকুরবাড়িটি দেখার মতো। এটি হিন্দুদের একটি তীর্থস্থান। এখানে প্রতিবছর চৈত্রমাসে ত্রয়োদশী তিথিতে বারুনীর মেলা অনুষ্ঠিত হয়। শ্রী হরিচাঁদ
ঠাকুরের জন্ম-মৃত্যু স্মরণে পূণ্যলাভ-প্রত্যাশী হিন্দুসম্প্রদায় হরিচাঁদ ঠাকুর মন্দিরসংলগ্ন ‘কামনা সাগর’ নামক পুকুরে পূণ্যস্নান করে হরিচাঁদ মন্দিরটি সাতবার প্রদক্ষিণ করেন। 

ঙ) প্রাকৃতিক: পর্যটন আকর্ষণ:


১। মধুমতি নদীঃ
নদীমাতৃক এ জেলার সর্বত্রই খাই-খন্দর, বিলঝিল ও খালবিল ছড়িয়ে আছে। মধুমতি নদীর তীরে অবস্থিত গোপালগঞ্জ জেলা শহর। এ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে মধুমতি নদী। আয়তন প্রায় এক হাজার চারশত চুরাশি বর্গকিলোমিটার। মধুমতি নদী ছাড়াও কুমার নদ, ঘাঘর নদী, বাগিয়ার নদী এ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। বিল-বাওড় রয়েছে অনেক যেমনঃ চান্দার বিল, কাজুলিয়ার বিল, মোল্লার বিল, আটা ভাঙার বিল, তারাইল বিল, কান্দির বিল, বর্নিও বাওর।