Wellcome to National Portal
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

ময়মনসিংহ জেলা

 

ক) ঐতিহাসিক, প্রত্নতাত্ত্বিক ও স্থাপত্য: পর্যটন আকর্ষণ

১. রাজরাড়ি শশী লজঃ
শশীলজ এর অপর নাম ‘ময়মনসিংহ রাজবাড়ি’। ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল আন্ত:জেলা সড়কের পাশে জেলা পরিষদ ভবনের লাগোয়া চত্বরে এর অবস্থান। ৩.৬৪ হেক্টর জমিতে প্রাচীর ঘেরা একটি প্রাসাদোপম মনোরম ভবন, একটি পুকুর, বাগান, ফোয়ারা ও মার্বেল পাথরে তৈরি ভেনাস ভাস্কর্য। সে আমলের জমিদার সূর্যকান্ত ১৮৮০ সালে এটি নির্মাণ করেন। কিন্তু ১৮৯৭ সালে এক ভূমিকম্পে প্রাসাদটি ধসে পড়লে সূর্যকান্তের পালিতপুত্র জমিদার শশীকান্ত এটিকে পুর্ননির্মাণ করে বর্তমান আদল প্রদান করে। প্রাসাদের সামনে একটি সুদৃশ্য ফোয়ারাসহ বাগান রয়েছে। ফোয়ারার মাঝখানে একাট চারপলাকার থামের মতো মঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে আছে ভেনাস ভাস্কর্য। প্রাসাদের পেছনে রয়েছে একটি পুকুর। শশীলজ ১৯৫১ সাল থেকে মহিলা শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহা-বিদ্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

২. কেলা তাজপুরঃ
এটি ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের কুমুরি গ্রামের ভেতর দিয়ে বহতা ঝুরিয়া নামের নদী পাড়ের একটি জায়গা ঐতিহাসিক কেলা তাজপুরের স্মৃতি বহন করে চলেছে। এখানে জড়িয়ে আছে সখিনা ও ফিরোজ দেওয়ানের রোমাঞ্চকর উপাখ্যান। গৌরীপুর শহর থেকে রিক্সা অথবা ভ্যানে করে যাওয়া যায়।

৩. মুক্তাগাছা রাজবাড়িঃ
ময়মনসিংহ শহরের ১৬ কিমি উত্তর পশ্চিমে মুক্তাগাছা উপজেলা শহর। এ শহরের প্রধান বাজারের উত্তর-পশ্চিমে জমিদার বাড়িটির অবস্থান। মাঠের উত্তরে জলটুঙ্গী পুকুরের পশ্চিম-উত্তর পাড়ে সম্পূর্ন পাথরে তৈরি একটি দক্ষিণমুখী ছোট আকারের শিব মন্দির আছে।পাটনা থেকে পাথর এনে এ মন্দির নির্মাণ করাহয়েছে। মাঠের পশ্চিমে পুর্বমুখী তিনটি প্রাসাদ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। উত্তরের প্রাসাদটি শ্রীধর হিস্যা বাড়ি (বর্তমানে আমর্ড পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার), মাঝের আটআনি হিস্যাবাড়ি (বর্তমানে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি) এবং দক্ষিণেরটি শশীকান্তের প্রাসাদ (বর্তমানে শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়) নামে পরিচিত। এ অংশের পিছনে একটি পুকুর রয়েছে। প্রাসাদ চত্বরের উত্তর পূবদিকে আরও কিছু দীঘি, পুকুর ও স্থাপনা ছড়িয়ে আছে। উত্তর দিকে আছে রাজঘাট এবং দক্ষিণে জোড়শিব মন্দির, বিদ্যালয়, দাতব্য চিকিৎসালয় ইত্যাদি। অবশিষ্ট স্থাপনাগুলো পরবর্তী জমিদারী আমলের বিভিন্ন পর্বে বিভিন্ন উত্তরাধিকারী নির্মাণ করেছিল।


৪. কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি বিজরিত স্থান (ত্রিশাল দরিরামপুর): 
ঢাকা থেকে বাসে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে ময়মনসিংহ পৌঁছার ২০ কিমি বাকী থাকতে সড়কের পশ্চিমপাশে ত্রিশাল উপজেলা শহর। এর অদূরবর্তী পশ্চিমের দরিরামপুর গ্রামে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর শৈশবের একাংশ অতিবাহিত করেছিলেন। সে স্মৃতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে ঐ স্থানে বর্তমানে নজরুল একাডেমী (সাবেক দরিরামপুর স্কুলঃ কবি এ স্কুলেরই ছাত্র), নজরুল ডিগ্রি কলেজ, নজরুল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, দুখু মিয়া বিদ্যানিকেতন, নজরুল জাদুঘর মিলনায়তন ও কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। এছাড়াও কবির স্মৃতিবিজড়িত অন্যান্য দর্শণীয় স্থান হল কাজী শিমলা দারোগা রাড়ি, বিদ্যালয় পুকুর, বিচতিয়া বেপারী বাড়ির পুকুর, বটগাছ, সুকানি বিল, টুনিভাঙ্গা বিল, সুতিয়া নদী প্রভৃতি। দারোগা বাড়িতে কিছু ভাঙ্গা খাটের টুকরোও সংরক্ষিত আছে। এসবই কবির বাল্যস্মৃতি বিজরিত। বিচুতিয়া বেপারী বাড়িতে কবি জায়গীর থাকতেন। তাই এ বাড়ির বৈঠকখানা, পুকুর ও বট গাছের সাথে কবির স্মৃতি গভীরভাবে মিশ্রিত। এ বটগাছের নিচে বসে কবি বাঁশি বাজাতেন। এ স্থানটি বর্তমানে ‘নামাপাড়া শকুনীবিল’ নামে পরিচিত। এর পাশেই দুখুমিয়া স্কুল। সম্প্রতি এখানে একটি নজরুল মঞ্চ ও বিশ্রামাবাস প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ছায়াঘেরা কোকিল ডাকা এ পরিবেশ এমনিতেই সবার ভাল লাগবে।

গ) সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলকঃ পর্যটন আকর্ষণঃ


১. শিল্পাচার্য্য জয়নুল আবেদীন সংগ্রহশালাঃ
এটি একটি শিল্পকর্ম সংরক্ষণ কেন্দ্র। সরকার কর্তৃক শিল্পাচার্য্য জয়নুল আবেদীনের বিভিন্ন শিল্পকর্ম দেশব্যাপী সংরক্ষেণের নির্দেশ দেয়ার পর শিল্পীর নিজের এলাকা ময়মনসিংহে এ সংগ্রহশালাটি গড়ে উঠে।
ময়মনসিংহ শহরের উত্তর প্রান্তে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ঘেঁষে ১৯৭৫ সালে এটি স্থাপিত হয়। এ সংগ্রহশালায় প্রথমে ৭০টি চিত্রকর্ম স্থান পায়। এ ছবিগুলোর বেশীর ভাগই ছিল তৈলচিত্র। এগুলো বিভিন্ন
দেশ ভ্রমণকালে শিল্পাচার্যের অংকিত ছবি, গুনটানা, নদী পারাপারে অপেক্ষায় পিতা-পুত্র, দুর্ভিক্ষের ছবি উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে এ সংগ্রহশালায় ৫৩টি অমূল্য ছবি রয়েছে। শিল্পাচার্যের স্বপ্ন অনুযায়ী পরবর্তী
কালে এখানে একটি আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

২. আনন্দমোহন কলেজঃ
ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ বাংলাদেশে শিক্ষা আন্দোলনের ক্ষেত্রে এক গৌরবময় ঐতিহ্যের প্রতীক। এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ার ক্ষেত্রে প্রধান উদ্যোগ ছিল উপমহাদেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক
আনন্দমোহন বসুর। ১৯৪৭ সাল থেকে এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৯০ এর দশকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত হয়। বর্তমানে কলেজটিতে ১৮টি বিষয়ে অনার্স ও স্নাতকোত্তর কোর্স চালু আছে।

৩. বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ঃ
ময়মনসিংহ শহরের ৩ কিমি দক্ষিণে পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের পশ্চিম তীরে প্রায় ১২০০ একর জায়গায় জুড়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের উচ্চতর কৃষি শিক্ষা ও গবেষণার অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠান। পূর্ব পাকিস্তানের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ১৯৬১-এর প্রেক্ষিতে জাতীয় শিক্ষা কমিশন এবং খাদ্য ও কৃষি কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯৬১ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬১ সালে মাত্র ২টি অনুষদের অধীনে ২৩টি বিভাগ নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬টি অনুষদের অধীনে ৪১টি বিভাগ রয়েছে। অনুষদগুলো হলোঃ পশু চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুষদ, কৃষি অনুষদ, পশু পালন অনুষদ, কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীন সমাজবিদ্যা অনুষদ, কৃষি প্রকৌশল কারিগরি অনুষদ এবং মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদ।

ঘ) বিনোদনমূলকঃ পর্যটন আকর্ষণঃ 

১. মুক্তাগাছার মন্ডাঃ
রাজবাড়ির গেটের অদূরে বিখ্যাত ‘মুক্তাগাছার মন্ডা’ বিক্রেতাদের সারি সারি দোকান। দুধ চিনি দিয়ে তৈরি এ খাবার প্রসিদ্ধ বহু দিন ধরে টিকে আছে। কথিত আছে, মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য্য চৌধুরীর শাসন আমলে গোপাল পাল নামে এক ব্যক্তি এক রাতে স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে এ মিষ্টি খাবার বানাতে শুরু করেছিল।


ঙ) নৌ-পর্যটনঃ পর্যটন আকর্ষণঃ 

১. ব্রহ্মপুত্র নদঃ
ব্রহ্মপুত্র নদের সৌন্দর্য্য ও প্রাকৃতিক দৃশ্য অবলোকনের জন্য বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যটকদের হৃদয় আকৃষ্ট করে।

চ) প্রাকৃতিকঃ পর্যটন আকর্ষণঃ

১. ভালুকা বনাঞ্চলঃ
ময়মনসিংহ শহরের দক্ষিণে ভালুকা উপজেলা অবস্থিত। এ উপজেলা রয়েছে বিস্তৃত সবুজ বনাঞ্চল। এটি ‘ভাওয়াল গড়’ নামে পরিচিত।

২. গারো পাহাড়ঃ
ভারতের পশ্চিম মেঘালয়ে গারো পাহাড়ের দক্ষিণমুখী সম্প্রসারিত পাহাড়শ্রেণী। বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার উত্তর সীমান্ত অঞ্চল জুড়ে এটি পশ্চিম কুরি বিল থেকে পুবে ভোগাই নদী পর্যন্ত বিস্তৃত। গারো পাহাড়ে গারো, হাজং উপজাতিরা বসবাস করে। গারো পাহাড়ে গহীন অরণ্য, স্রোতস্বিনী ঝরণা, জলাশয়, গন্ডার, বাঘ, হাতি, বন্য মহিষ ইত্যাদি বাস করে। গারো পাহাড়ের মধ্যস্থল দিয়ে বৃহত্তম সিমসং নদী প্রবাহিত। নদীর উভয় তীরে গারো উপজাতি গ্রাম বিস্তৃত।