ক) ঐতিহাসিক, প্রত্নতাত্ত্বিক ও স্থাপত্য নিদর্শনঃ
১. তেলিয়াপাড়া স্মৃতিসৌধঃ
হবিগঞ্জের অন্যতম আকর্ষণ তেলিয়াপাড়া স্মৃতিসৌধ। এটি স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি বহন করে দাঁড়িয়ে আছে। এ জেলার তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ডাক বাংলোতে মুক্তিযুদ্ধের মুহম্মদ আতাউল গনি ওসমানী ৪ এপ্রিল ১৯৭১ সালের দ্বিতীয় ও চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কতিপয় অফিসারদের সঙ্গে মিলিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
খ) ধর্মীয়ঃ
১. শংকর পাশা মসজিদঃ
এটি রাজিউড়া ইউনিয়নের উচাইল গ্রামে অবস্থিত। একটি বারান্দাসহ এক সালাতকোঠা আকারে তৈরী হয়েছে। সালাতকোঠাটি ৬ মি. ৫ সে. মি. বর্গাকার। আর বারান্দা ১ মি. ৬ সে.মি চওড়া। সালাতকোঠার ছাঁদ একটি আধাগোলাকার বড় গম্বুজ দিয়ে ঢাকা। এখানে গম্বুজের সংখ্যা তিনটি। এ মসজিদের অন্যতম আকর্ষণ দেয়ালে কারুকাজ করা ইটের প্রচুর অলঙ্করণ। এটি সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহের শাসনামলে (খ্রি: ১৪৯৩-১৫১৯ সাল) নির্মিত হয়েছে। এর দক্ষিণ অঙ্গনে বিশাল দীঘির পাড়ে একটি কবর আছে। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী এ কবরে মসজিদের নির্মাতা শাহ মজলিস আমিন সমাহিত আছেন। তিনি এ অঞ্চলের মুসলিম বিজাতা হিসেবে পরিচিত।
গ) সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলঃ
১. খাসিয়া উপজাতীঃ
বৃহত্তর সিলেট জেলার পাহাড়ি এলাকায় খাসিয়া উপজাতীদের বসবাস। এদের বর্নাঢ্য জীবন দেশী বিদেশী পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয়।
ঘ) প্রাকৃতিকঃ
১. কমলা রানীর দীঘিঃ
বানিয়াচং গ্রামে রয়েছে কমলা রানীর দীঘি। কমলা রানীর দীঘির আরেক নাম ‘সাগর দীঘি’। দেশের বৃহত্তম দীঘি যা সাগর দীঘি, কমলাবতীর দীঘি বা পদ্মাবতীর দীঘি নামে পরিচিত।। গ্রামের মধ্যস্থলে প্রায় ৬৫ একর আয়তন বিশিষ্ট এ দীঘিটির দৈর্ঘ্য ২ কি:মি: এবং প্রস্থ ১ কি: মি:। এ দীঘি খননকে কেন্দ্র করে অনেক লোককাহিনীও প্রচলিত আছে। ১৯৪২ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এ দীঘির পাড়ে বসে পল্লী কবি জসীমউদ্দিন রচনা করেছিলেন তার বিখ্যাত কবিতা ‘কমলা রানীর দীঘি’। দীঘিটির পশ্চিম পাড়ে রয়েছে বানিয়াচং রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা রাজা কেশব মিশ্রের প্রাচীন রাজপ্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ। দীঘিকে কেন্দ্র করে প্রচলিত অনেক লোককাহিনী রয়েছে।
২. হাওড়ঃ
সমগ্র সুনামগঞ্জ জেলা, হবিগঞ্জ জেলার বৃহদংশ এবং সিলেট শহর ও মৌলভীবাজার জেলার অংশবিশেষ নিয়ে বৃহত্তর সিলেট জেলার বড় অংশ অনেকগুলো হাওর দিয়ে বেষ্টিত। সিলেট জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাওরগুলো হলো : শনির হাওর, হাইল হাওর, হাকালুকি হাওর, ডাকের হাওর, মাকার হাওর, ছাইয়ার হাওর, টাঙ্গুয়ার হাওর এবং কাওয়া দীঘি হাওর।
৩. খোয়াই নদীঃ
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আঠারপুড়া পাহাড়ের পূর্বাংশে উদ্ধূত হয়ে প্রথমে পশ্চিম এবং পরে উত্তর দিকে প্রবাহিত হওয়ার পর সিলেট জেলার বাল্লা নামক স্থান দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এরপর হবিগঞ্জ শহরের পূর্ব প্রান্ত দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নবীগঞ্জের নিকটে কালনী নদীর মোহনার কাছে মেঘনা নদীতে পতিত হয়েছে।
৪. বনভূমি/কালেঙ্গাবনঃ
এটি চুনারুঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত। চুনারুঘাটের পর এক-দুই কি:মি: পেরুতেই কাঁচা রাস্তা শুরু। প্রায় ৫ কি.মি. চলার পর পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বিশাল বনের আভাস চোখে ভেসে উঠে। এর পর সীতার হাওর ও পুকুর পেরিয়ে বন। ২৫০ মি. ভিতরে গহীন বন বিভাগ তৈরী করেছে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। পাহাড়ের উপর আছে ঐ বিভাগের একটি বিশ্রামাগার।
৫. শাহাজিবাজার ফ্রুটস ভ্যালীঃ
মাধবপুর উপজেলার রঘুনন্দন পাহাড়ের নিচে হবিগঞ্জ গ্যাস ফিল্ডের পাশে ২.০২ হেক্টর জায়গা নিয়ে এর অবস্থান। মানুষের সৃষ্ট এ বাগানে ১৩০ প্রজাতীর ফলের গাছ, ১৬ প্রজাতীর সবজিও ২৪ প্রজাতীর ফুলের গাছ আছে।
৬. চা-বাগানঃ
হবিগঞ্জ তথা বৃহত্তর সিলেটের অন্যতম আকর্ষণ চা-বাগান। চা-বাগান দেখার সবচেয়ে উপযুক্ত এলাকাগুলোর নাম জুরি বালি, কাপনা পাহাড়, লংলি ভ্যালির লোহাইউনি। এখানে সার্বিক বিবেচনায় আদর্শ স্থানীয় চা-বাগান হলো রামগঙ্গা চা-বাগান। চুনারুঘাট উপজেলায় এর অবস্থান। রামগঙ্গা চা-বাগান লম্বায় আনুমানিক ৪ কি:মি: ও চওড়ায় প্রায় ২.৫ কি:মি:। বাগানের ভেতরটা সামান্য উঁচূ। প্রায় সমতল ও মাঝারি উচ্চতার টিলা আর টিলা। এ সবের ঢালে সারি সারি চা-গাছ। ছেঁটেকেটে গাছগুলোর গড় উচ্চতা গড়ে ৭৫ সে. মি.। প্রতিটি গাছের ঘের গড়ে ১.৮০ মিটারের মতো। এগুলোর মাঝে ছায়াবৃক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বড় বড় কড়ই, লোহসিরিষ, রাধাকৃষ্ণ প্রভৃতি।
ঙ) গ্রামীণঃ
১. বানিয়াচং গ্রামঃ
এশিয়ার বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচং। হবিগঞ্জ জেলার অন্যতম এই গ্রামের নাম অনেকেরই জানা। বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম শিকাগো শহরে পরিণত হওয়ায় বানিয়াচং বর্তমানে বৃহত্তম গ্রামের খ্যাতি লাভ করেছে। ৪৯৫ বর্গমাইল বিশিষ্ট ১৫ টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত বানিয়াচং উপজেলা মূলত হাওর বেষ্টিত। রাজধানী হিসেবে এটিকে রক্ষায় ‘গড়ের খাল’ নামে ‘প্রতিরক্ষা পরিখা’ হিসেবে একটি খাল নির্মাণ করেছিলেন তৎকালীন রাজা বাদশারা। বানিয়াচংয়ের উত্তরে যাত্রা দীঘি, মজলিশপুর দীঘি, কামালখানী দীঘি, জামালপুরের দীঘি, দেওয়ান দীঘি, ঠাকুরাইন দীঘি ও শ্যাম বাউলের আখড়ার দীঘি উল্লেখযোগ্য। তবে রাজা ক্যাশব মিশ্রের প্রপৌত্র পদ্মনাথ প্রজাদের জলকষ্ট নিবারণের জন্য কমলা দীঘি খনন করেছিলেন বলে জানা যায়। গ্রামের মধ্যস্থলে প্রায় ৬৫ একর আয়তন বিশিষ্ট এ দীঘিটির দৈর্ঘ্য ২ কি:মি: এবং প্রস্থ ১ কি: মি:। এ দীঘি খননকে কেন্দ্র করে অনেক লোককাহিনী ও প্রচলিত আছে।