সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ৮ সেপ্টেম্বর ২০২০
নরসিংদী জেলা
ক) ঐতিহাসিক, প্রত্নতাত্ত্বিক ও স্থাপত্য নিদর্শন : পর্যটন আকর্ষণ :
১. উয়ারি বটেশ্বর :
বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থানের নাম। ছাপাঙ্কিত রৌপ্যমুদ্রার প্রাপ্তি স্থান হিসেবে খ্যাত নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত উয়ারী এবং বটেশ্বর গ্রাম দুটি
দীর্ঘদিন থেকে পরিচিত। ১৯৩৩ সালে মুহম্মদ হানিফ পাঠান নামের একজন স্কুলশিক্ষক সর্বপ্রথম উয়ারী-বটেশ্বরের প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব জনসমক্ষে তুলে ধরেন। দীর্ঘ সময় ধরে তাঁর ছেলে শৌখিন প্রত্নতাত্ত্বিক
মুহম্মদ হাবিবুল্লা পাঠান উয়ারী-বটেশ্বর থেকে প্রত্নবস্তু সংগ্রহের পাশাপাশি গবেষণার কাজও আরম্ভ করেন। বিভিন্ন সময়ে অনুসন্ধানের ফলে আবিষ্কৃত হয়েছে- উয়ারী-বটেশ্বর গ্রাম দুটির বেশির ভাগ স্থানজুড়ে
প্রাচীন বসতি ছিল। সম্প্রতি প্রতন্তত্ত্ববিদ প্রফেসর ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান কর্তৃক সীমিত আকারের প্রত্নতাত্ত্বিক খনন থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নবস্তুর সন্ধান মিলেছে। এখান থেকে প্রাপ্ত
রুলেটেড মৃৎপাত্র, নবড্ মৃৎপত্র, স্যান্ডউইচ কাচের পুঁতি, স্বর্ণ দিয়ে আবৃত এক ধরনের কাচের পুঁতি, উচ্চমাত্রায় টিন মিশ্রিত ব্রোঞ্জ প্রমাণ করে এ অঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং রোমান
সাম্রাজ্যের যোগাযোগ ছিল। উয়ারী-বটেশ্বর এ অঞ্চলের প্রথম নগরায়নের চিহ্ন বহন করে। এখানে আবিস্কৃত বৌদ্ধ পদ্ম মন্দির, বৌদ্ধ বিহার ও বৌদ্ধ কুন্ডু নয়ানাভিরাম স্থাপত্যিক নিদর্শন। এটি একটি
নদীবন্দর ছিল এবং এর সঙ্গে তৎকালীন অন্যান্য বন্দরের বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল। অনুমান করা হয় এটি মৌর্য সাম্রাজ্যের পূর্ব সীমানা ছিল। কার্বন-১৪ পরীক্ষার ফলে এ পর্যন্ত উয়ারী-বটেশ্বরে খ্রিস্টপূর্ব
৪৫০ অব্দের মানব বসতির চিহ্ন পাওয়া গেছে। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণাকাজের জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের প্রায়ই উয়ারী-বটেশ্বরে যেতে দেখা যায়। উয়ারী-বটেশ্বরে প্রত্নস্থানের ধর্মীয় প্রকৃতি
জানা যায়নি। তবে সম্প্রতি আবিষ্কৃত নবড্ মৃৎপাত্রটি এতদঞ্চলে বৌদ্ধ সংস্কৃতির ইঙ্গিত বহন করে। প্রাচীনতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের অন্যতম ক্ষেত্র উয়ারী-বটেশ্বরে একটি আধুনিক প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে চলছে।
খ) ধর্মীয় : পর্যটন আকর্ষণ :
১. শাহ মনসুরের দরগা :
শিবপুর উপজেলার পুটিয়া ইউনিয়নের কুমারদি গ্রামে এ ইমরতের অবস্থান। এ মাজারটি স্থপত্য শৈলীতে মুঘল প্রথাসিদ্ধতা বজায় রয়েছে। এ স্থাপনার অনুচ্চ মঞ্চটি ৩০ বর্গ মি এবং চৌচালাকার নির্মিত। ধারণা করা
হয় হযরত শাহ মনসুর নামে একজন আওলিয়ার মাজার এটি।
২. পারুলিয়া মসজিদ :
পলাশ উপজেলার পারুলিয়া গ্রামে এস্থাপনার অবস্থান। এটি একটি প্রথা সিদ্ধ মুঘল স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্য সম্বলিত তিন-গম্বুজ মসজিদ।এটি ১৭১৬ সালে জনৈক নায়েব দেওয়ান শরীফের স্ত্রী জয়নাব বিবি নির্মাণ
করেছিলেন।
গ) সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক : পর্যটন আকর্ষণ :
১. কবি শামসুর রহমানের বাড়ি :
দেশের অন্যতম কবি শামসুর রহমান এই জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন। বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি অনেক কবিতা ও উপন্যাস রচনা করেন।
ঘ) উৎসব সম্পর্কিত : পর্যটন আকর্ষণ :
১. বাউল মেলা :
নরসিংদীর ঐতিহ্যবাহী এই বাউল মেলা মুঘল আমল থেকে হয়ে আসছে। দেশের সব অঞ্চল থেকে বাউলরা এ মেলায় অংশগ্রহণ করে থাকেন। এছাড়া অনেক সাধারণ মানুষও এ মেলায় অংশগ্রহণ করে থাকে।
ঙ) নৌ-পর্যটন পণ্য : পর্যটন আকর্ষণ :
১. মেঘনা নদীতে নৌ বিহার :
নরসিংদীর মেঘনা নদীতে নৌকা দিয়ে বেড়াতে দারুণ আনন্দ। সারাদিনের জন্য মেঘনায় ঘুরে বেড়িয়ে দুকূরের নয়নভোলা দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হবেন যে কোন পর্যটক।
ছ) প্রাকৃতিক : পর্যটন আকর্ষণ :
১. লালমাটির পাহাড় :
ঢাকা থেকে ৬৫ কি.মি. দূরে সিলেট মাহ-সড়ক সংলগ্ন এলাকায় ০৭টি পাহাড় আছে, যেগুলো লাল মাটির তৈরী। পাহাড়গুলো ছায়াঘেরা অপরূপ সৌন্দর্য মন্ডিত।
২. বনাঞ্চল :
নরসিংদী জেলার উত্তর প্রান্তে মনোহরদী উপজেলার ১৫ কি.মি. দূরে আড়িয়াল খাঁ নদীর পাড়ে রামপুরের জঙ্গল অবস্থিত। এখানে প্রায় তিন/চার হাজার বানর রয়েছে।
৩. সিজনালী হ্রদ :
নরসিংদী জেলার ছায়াঘেরা পাহাড়সমূহের অপরূপ দৃশ্যসমূহকে আরো আকর্ষণীয় করেছে পাহাড়ের মাঝ থেকে বয়ে যাওয়া সিজনালী হ্রদ।
৪. সোনাইমুড়ির টেক :
নরসিংদীর সোনাইমুড়ির টেকের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের বিমোহিত করে। বিপুল বনজসম্পদ রয়েছে এখানে। এখানে পার্ক ও পিকনিক স্পট রয়েছে। পাহাড়ের শীর্ষে একটি বাংলোও আছে।
জ) গ্রামীণ, কৃষি ও স্থানীয় ঐতিহ্য : পর্যটন আকর্ষণ :
লটকন বাগান :
লটকন ফলের সীজনে, লটকন বাগান দেখতে যেতে পারেন নরংসিংদী, বেলাব উপজেলার আমলাব ইউনিয়নের লাখপুর। এখানে বিখ্যাত খাবারের নাম সাগর কলা।