ক ঐতিহাসিক, প্রত্নতাত্ত্বিক ও স্থাপত্য নিদর্শনঃ
১. হাসন রাজার স্মৃতি বিজড়িত বাড়িঃ
হাসন রাজা মরমি কবি ও সাধক। তাঁর প্রকৃত নাম দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরী। ১২৬১ বঙ্গাব্দের ৭ পৌষ (১৮৫৪ সালের ডিসেম্বর) সিলেট জেলার সুনামগঞ্জে লণশ্রী গ্রামের এক জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন ঐশীপ্রেমী এবং সেই প্রেমে মাতোয়ারা হয়েই তিনি গান রচনা করতেন। তিনি গানের ভণিতায় নিজেকে ‘পাগলা হাসন রাজা’, ‘উদাসী’, ‘দেওয়ানা’, ‘বাউলা’ ইত্যাদি বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর পিতৃকুল এবং মাতৃকুল উভয় ছিল অযোধ্যাবাসী এবং হিন্দু ধর্মালম্বী, পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তাঁরা সুনামগঞ্জে আসেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এই বাড়িটিতে তার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। ১৯২২ সালের ৭ ডিসেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।
২. প্রাচীন লাউর রাজ্য (লাউরের গড়) সুখাই জমিদার বাড়িঃ
১৯২২-২৩ সালের সুখাইড়-এর নানকর বিদ্রোহ উল্লেখযোগ্য। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সুনামগঞ্জ জেলার বহু নেতা কর্মী সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালের পর সুনামগঞ্জে বামপন্থী আন্দেলন প্রসার লাভ করে। এলাকাটি তাহির উপজেলার অন্তর্গত।
৩. ডলুরা স্মৃতিসৌধঃ
সুনামগঞ্জের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সুরমা নদীর ওপারে রঙ্গাচর ইউনিয়ন। এখানে সীমান্তের ওপারে মেঘালয়ের পাহাড় ঘেঁষে স্মৃতিসৌধ। ১৯৭১ সালে ৪৮ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে এখানে সমাহিত করা হয়। তাঁদের স্মৃতিরক্ষার্থে নির্মিত হয় এই ডলুরা স্মৃতিসৌধ।
খ) ধর্মীয়ঃ
শাহ আরেফিনের মাজারঃ
আধ্যাত্মিক সুফি শাহ আরেফিনের মাজার তাহিরপুরের যাদুকাটা নদীর সংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। প্রতি বছর তার ওফাত দিবসে ওরশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ভারত থেকেও প্রচুর ভক্তের উপস্থিতি ঘটে।
গ) নৌ-পর্যটনঃ
১. যাদুকাটা নদীঃ
যাদুকাটা নদীর পানি স্বচ্ছ সবুজ। যাদুকাটা নদীর পাড় উঁচু। এ নদীতে লোকজন ঝাকিজালে মাছ ধরে।
২. সুরমা নদীতে নৌ-পরিবহনঃ
সুনামগঞ্জ শহরের পাশ থেকে বয়ে গেছে সুরমা নদী। পড়ন্ত বিকেলে নৌবিহার করে দূরে হাওরের দিকে গিয়ে বাংলার নৈসর্গিক শোভা খুঁজে পাওয়া যায়। শুধু তাই নয় এখান থেকে খাসিয়া ও জৈন্তা পাহাড় দেখা যায় কালো মেঘের মতো।
ঘ) প্রাকৃতিকঃ
১. হাওর-বাওরঃ
সুনামগঞ্জে হাওরের সংখ্যা ৫২ টি। তাই এ এলাকার অপর পরিচিতি ‘ভাটির দেশ’। ভাটির দেশের জীবনযাত্রার নিত্য সাথী নৌকা, মাছ ধরা ও আধ্যাত্মিক গান।
২. টাংগুয়ার হাওরঃ
সুনামগঞ্জ শহর থেকে আনুমানিক ৪০ কি.মি. দূরে খাসিয়া-জৈন্তা এবং ভারতের মেঘালয় পাহাড়ি কোল ঘেঁষে এর অবস্থান। সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলাধীন ১০টি মৌজা নিয়ে বিস্তৃত একটি হাওর। মৌজাগুলো হলো - জগদীশপুর, ভবানীপুর, লামাগাঁও, রামসিংহপুর, মহজমপুর, মেইন দাগ, মায়াজুরি, ভাঙ্গাচরা পূর্ব, নোয়াগাঁও এবং টাঙ্গুয়ার হাওর। এই হাওরটিতে ছোট বড় ১২০টি বিল রয়েছে। এটি দেশের মৎস্য সম্পদের একটি অন্যতম উৎস। হাওরটি খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত হওয়ায় খুব সহজেই ঘূর্ণিঝড় এখানে আঘাত হানে। টাঙ্গুয়ার হাওরের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের সহজেই আকৃষ্ট করে। সুনামগঞ্জের অন্যান্য হাওরের মধ্যে সদরে দেয়ার, নলুয়া, ধানকুনিয়া, দিরাই ও শল্লা’র প্রাকৃতিক দৃশ্য বেশ মনোরম।
৩. চুনা পাথরঃ
সুনামগঞ্জ জেলার ভাঙ্গেরঘাট-লালঘাট-টাকেরঘাট এলাকায় চুনাপাথরের ভূ-পৃষ্ঠীয় ও ভৃ-পৃষ্ঠের স্বল্প গভীরতায় মজুত রয়েছে।