আদিতে এটি ছিল দিঘাপাতিয়া মহারাজাদের বাসস্থান। বর্তমানে এটি ব্যবহৃত হয় উত্তরা গণভবন বা উত্তরাঞ্চলের গভর্নমেন্ট হাউস হিসেবে। নাটোর শহর থেকে প্রায় ২.৪০ কিমি দূরে প্রাসাদটি অবস্থিত। নাটোর-বগুড়া মহাসড়ক থেকে একটি সংযোগ সড়কের মাধ্যমে প্রাসাদটিতে যাওয়া যায়। ৪৩ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এলাকাটি একটি পরিখা ও উচু প্রাচীরবেষ্টিত। এর পূর্ব পার্শ্বে রয়েছে একটি চারতলাবিশিষ্ট পিরামিডাকৃতির প্রবেশদ্বার। এটি উপরের দিকে ক্রমশ সরু হয়ে একটি ঘড়িবিশিষ্ট টাওয়ারে শেষ হয়েছে। ইংরেজি ‘ই’ অক্ষরের আদলে নির্মিত প্রাসাদটির সম্মুখভাগে রয়েছে তিনটি বারান্দা। ছাদের উপরে প্যারাপেটটি মেরলোন নকশায় অলংকৃত। প্রাসাদ কেন্দ্রের মূল হলঘরটির উপরে গোলাকার একটি গম্বুজ রয়েছে। প্রধান প্রবেশ পথের সিড়ির দুপ্রান্তে রয়েছে প্রমাণ সাইজের ঢালাই লোহায় নির্মিত নব্য-ক্ল্যাসিক্যাল গ্রিক রীতির অসাধারণ দুটি নারী ভাস্কর্য।
২. নাটোর রাজবাড়ি :
রাজশাহী থেকে প্রায় ৪৮ কিমি পূর্বে নাটোর জেলা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত নাটোর রাজদের বাসভবন। অষ্টাদশ শতকের প্রথম দিকে এটি নির্মিত হয়। নাটোর রাজপরিবারের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা রামজীবন নাটোরেই স্থাপন করেছিলেন তাঁর প্রশাসনিক কেন্দ্র এবং সেই সাথে নির্মাণ করেছিলেন রাজপ্রাসাদ, দীঘি, মন্দির এবং ফুল ও ফলের বাগান। প্রকৃতপক্ষে নাটোর ছিল লস্করপুর পরগনা অন্তর্গত কানাইখালি তরফ-এ একটি ছোট বসতি। প্রায় ৩৭.২০ একর জমির উপর নির্মিত বর্তমান প্রাসাদ কমপ্লেক্সটি দুটি প্রতিরক্ষা পরিখা দ্বারা বেষ্টিত ছিল। পরিখাটি ছই ভাঙ্গার বিল নামে পরিচিত। ভগ্ন প্রাসাদের বিচ্ছিন্ন সাতটি ব্লকে বেষ্টনকারী কাদা ও আগাছা আচ্ছাদিত দীঘি সেই পরিখার চিহ্ন বহন করছে। সাতটি ব্লকের মধ্যে মাত্র চারটিকে মোটামুটি সংস্কার করে বর্তমানে জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
৩. চলনবিল :
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিল এবং সমৃদ্ধতম জলাভূমিগুলির একটি। দেশের সর্ববৃহৎ এই বিলটি বিভিন্ন খাল বা জলখাত দ্বারা পরস্পর সংযুক্ত অনেকগুলি ছোট ছোট বিলের সমষ্টি। বিলটি সংলগ্ন তিনটি জেলা রাজশাহী, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ-এর অংশবিশেষ জুড়ে অবস্থান করছে। শুষ্ক মৌসুমে বিলের বৃহত্তর অংশ শুকিয়ে ২৫.৯ থেকে ৩১.০৮ বর্গ কিমি আয়তনের এক জল গহ্বরে পরিণত হয়, যাকে ‘মূল অংশ’ বলা যেতে পারে। এই মূল অংশকে ঘিরে দুটি এককেন্দ্রিক অসম ডিম্বাকার এলাকা আছে যেখানে আঞ্চলিকভাবে ‘ভাসমান ধান’ নামে পরিচিত সরু চালের ধান উৎপন্ন হয়। উত্তরবঙ্গের মাছের চাহিদা পূরণে চলন বিল এখনও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।