ক) ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্বিক ও স্থাপত্য নির্দশনঃ
পর্যটন আকর্ষণের নাম ও বর্ণনাঃ
১. রাজা মুকুট রায়ের ঢোল সমূদ্র পুকুরঃ
রাজা মুকুট রায়ের আমলে একবার পানির অভাব দেখা দেয়। এজন্যই প্রজাদের জন্য তিনি একটি বিরাট পুকুর খনন করেন। পুকুরের চারদিকে রয়েছে নানা ধরনের গাছপালা। রাজা মুকুটরায়ের ঢোল সমূদ্র পুকুর দেখবার মতো।
২. মরমী কবি পাগলা কানাইর সমাধিসৌধঃ
মরমী কবি পাগলা কানাইর সমাধিসৌধও ঝিনাইদহ জেলায়। বেড়বাড়ী গ্রামে জম্মেছিলেন মরমী কবি কানাই। এখানেই রয়েছেস পাগলা কানাইর সমাধিসৌধ।
৩. জোড় বাংলা মসজিদঃ
ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলায় জোড় বাংলা মসজিদ অবস্থিত। জোড় বাংলা মসজিদটি ব্যতিক্রম। এটির স্থাপত্যে হিন্দু রীতির প্রভাব রয়েছে। এর কোনো কোনটিতে কারুকাজময় ইটের বিচিত্র অলংকরণ রয়েছে। এর ১ কিঃ মিঃ পূর্বদিকে বাদুর গাছা গ্রামে রয়েছে বেড়াদিঘী ও শ্রীরাম রাজার দিঘী।
৪. গোরাই মসজিদ (ঝিনাইদহ):
১৯৭৪ সালে এটি ছিল একটি এক গম্বুজের মসজিদ। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্র্তৃক উৎখনন কাজের পরে মাটির নীচে কিছু স্তম্ভের ধবংসাবশেষ আবিস্কার করা হয়েছিল। খননের পর ধারণা করা হয় যে, এই মসজিদটি এক গম্বুজের মসজিদ ছিলনা। মিহরাবগুলোতে পোড়ামাটির চিত্রফলকগুলির শ্রী তেমন নষ্ট হয়নি। প্রায় অর্ধবৃত্তাকারে উপুর করা পেয়ালার আকৃতিতে নির্মিত গম্বুজটি ছিল দেখতে অত্যন্ত মনোরম। মসজিদের বাইরের দেয়ালে পোড়ামাটির সুন্দর চিত্রফলক ছিল। মসজিদে কোন শিলালিপি পাওয়া যায়নি। মসজিদটিকে হাল আমলে প্রায় নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে।
৫. পাঠাগার মসজিদঃ
রানীমাতার দিঘীনামক প্রাচীন জলাশয়ের প্রায় ২০০ মিটার উত্তর-পশ্চিমে এক প্রাচীন জলাশয়ের তীরে বেশ কয়েকটি প্রাচীন ইমারতের ধবংসাবশেষ ছিল। অসংখ্য ধবংসাবশেষ বহনকারী শাহীমহল নামক একটি প্রাচীন স্থানের অংশ বিশেষ ছিল এই পাঠাগারের ধ্বংসাবশেষ। সেই প্রাচীন জলাশয়ের পশ্চিম তীরে পাঠাগার মসজিদ নামে একটি মসজিদের ধবংসাবশেষ আবিস্কৃত হয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক ধবংসাবশেষের ইটগুলি দেখে সহজেই সুলতানী আমলের বলে ধারণা করা যায়।
৬. সাতগাছিয়া আদিনা মসজিদঃ
বারবাজার রেলষ্টেশন থেকে ৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে সাতগাছিয়া মৌজায় অবস্থিত আদিনা পুকুরের দক্ষিণ তীরে এই মসজিদটির ধবংসাবশেষ দেখা যায়। প্রত্নতত্ত্বের বিচারে এই মূল্যবান ধবংসাবশেষ আজ থেকে মাত্র কয়েকবছর আগে আবিস্কৃত হয়েছে। এখানে বহুকাল ধরে বিরাট আকারের এক উঁচু ঢিবি ছিল। বিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকের শেষ ভাগে স্থানীয় লোকেরা এখানে একটি বিরাট মসজিদের ধবংসাবশেষ আবিস্কার করেন। প্রথমে খড় দিয়ে পরে টালির ছাদ করে সেখানে নামাজ পড়তে শুরু করেন। মসজিদের অভ্যন্তরে ২৪টি স্তম্ভ ছিল এবং এগুলির সবই ছিল ইষ্টক নির্মিত। উক্ত মসজিদ সুলতানি আমল খান-ই-জাহানের পরেই খুব সম্ভব নির্মিত হয়েছিল।
৭. জোড়বাংলা মসজিদঃ
গলাকাটি মসজিদ থেকে সামান্য দূরে পূর্বে-পশ্চিমে বিস্তৃত একটি গভীর এবং শুষ্ক পুকুরের দক্ষিণে পাশাপাশি অবস্থানরত দুটি মোটামুটি উঁচু ঢিবি ছিল। ”বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ ” গ্রন্থে মন্দির সন্দেহ করা হলেও জনমত অনুসারে দুটি ঢিবি জোড় বাংলা মসজিদ বলে পরিচিত ছিল। বিংশ শতাব্দীর আশির দশকের শেষ দিকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক উৎখনন কার্য করার পরে এখানে একটি ছোট এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের ধবংসাবশেষ আবিস্কৃত হয়েছে। ফল ও লতাপাতার অনুকৃতিবিশিষ্ট টেরাকোটা অলংকরণযুক্ত ইট পাওয়া যায়। মসজিদের কাছে অবস্থিত অন্য ঢিবিতে একটি হুজরাখানার ইমারতের ধবংসাবশেষ পাওয়া যায়। সম্ভবত এজন্য ধবংসাবশেষটিকে জোড়বাংলা মসজিদ বলা হয়।
৮. গলাকটির মসজিদঃ
গোরাই মসজিদ থেকে প্রায় ২০০ মিটার উত্তরে-দক্ষিণে দীর্ঘ জলাশয়ের দক্ষিণে ৭.৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ২.৫০ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট একটি ঢিবি ছিল। ঢিবিটি প্রাচীন ইট পাথরের ভগ্নাংশ দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল। ঢিবির কেন্দ্রস্থলে ছিল কাল পাথরে নির্মিত দুটি প্রস্তর স্তম্ভ। “বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ” গ্রন্থে এ মন্দিরের বর্ণনা ছিল। বিংশ শতাব্দীর নব্বই-এর দশকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক উৎখনন কাজের পরে একটি মসজিদের ধবংসাবশেষ আবিস্কার করেছে। প্রাচীন মসজিদের ধবংসাবশেষ ও মসজিদের সাবেক দুটি স্তম্ভের উপর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর নতুন করে ছয় গম্ভুজ বিশিষ্ট মসজিদটি নির্মাণ করেছে।
৯. পীর পুকুর মসজিদ (ঝিনাইদহ):
বার বাজার ইউনিয়নের বেলাট-দৌলতপুর মৌজায় ও গোরাই মসজিদ থেকে কয়েকশ মিটার দূরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক একটি পনের গম্বুজ মসজিদের ধবংসাবশেষ আবিস্কৃত হয়েছে বিংশ শতাব্দীর আশির দশকের শেষদিকে। মসজিদটি পীর পুকুর নামক একটি প্রাচীন জলাশয়ের পাড়ে অবস্থিত। মসজিদটি সম্পূর্ণরূপে ইট দ্বারা নির্মিত ছিল এবং কোনো পাথরের ব্যবহার সেখানে চোখে পড়ে না। মসজিদটির কোনো লিপি পাওয়া যায়নি। তবে স্থাপত্যকৌশল দেখে ধারণা করা যায় যে, সুলতানী আমলের শেষ ভাগে এটি নির্মিত হয়েছিল।
১০. নূনগোলা মসজিদ (ঝিনাইদহ):
মিঠাপুকুরিয়া মৌজার দক্ষিণাংশে রানীমাতার দিঘী নামক প্রাচীন দিঘী থেকে প্রায় ২০০ মিঃ দুরে ও নুনগোলা নামক মাঝারী আকারের একটি প্রাচীন জলাশয়ের পশ্চিম তীরে নূনগোলা দিঘী অবস্থিত। এ মসজিদের প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ৫.৪৫ মিটার। চারদিকের দেয়াল ও বুরুজের কিছু কিছু অংশ বর্তমানে টিকে আছে। খুব সম্ভব মসজিদটি সুলতানী আমলের শেষদিকে নির্মিত হয়েছিল।
১১. শুকুর মল্লিক মসজিদ (ঝিনাইদহ):
ভৈরব নদীর উভয়দিকে হাসিলবাগ মৌজায় শুকুর মল্লিক নামক এক গম্বুজ মসজিদ অবস্থিত। বর্গাকার নির্মিত এই মসজিদের ধবংসাবশেষ মাটির উপরে খুব বেশী টিকে নেই (১৯৯৬ খ্রিঃ)। দেয়ালের অবশিষ্ট অংশ ইট হরণকারীদের দৌরাত্নে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। মসজিদের উপরে একটি মাত্র গম্বুজ ছিল। চার কোনে চারটি মিনারসহ গম্বুজটি বর্তমানে বিলুপ্ত। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে মসজিদের ধবংসাবশেষটি নির্ণয় করেন।