Wellcome to National Portal
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

কিশোরগঞ্জ জেলা

ক) ঐতিহাসিক, প্রত্নতাত্ত্বিক ও স্থাপত্যঃ পর্যটন আকর্ষণঃ


১. পাকুন্দিয়া এগারসিন্দুর ঐতিহাসিক স্থাপত্যঃ
কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুর ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র ও শঙ্খ নদী বেষ্টিত এলাকায় এর অবস্থান। উপজেলা সদর থেকে ৭ কিমি দুরত্বে নদী পেরিয়ে প্রথমে পড়বে এগারসিন্ধুর দুর্গ বলে পরিচিত
এই এলাকা। এ দুর্গ ষোল শতকের শেষ দিকে বার ভুঁইয়া নেতা ঈশা খাঁ তৈরি করেছিল। বলা হয়ে থাকে যে, এ দুর্গেই মোগল সেনাপতি মানসিংহের সাথে ঈশা খাঁ মল্ল যুদ্ধে জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু আজ আর সে দুর্গের কোন চিহ্ন নেই; বরং একটি মাটির টিবি, জঙ্গলের ভেতর ইতস্তত বিক্ষিপ্ত কিছু পাথরকুচি, একটি নীলকুঠির ধ্বংসাবশেষ প্রভৃতি রয়েছে। এখানে দু’টি মসজিদ আছে। একটি মসজিদের নাম শাহ মাহমুদ মসজিদ এবং অপরটি ‘সাদী মসজিদ’ নামে পরিচিত। এগার সিন্দুর মৌজার পাশের গ্রামের নাম মজিতপুর। এ গ্রামের অন্যতম আকর্ষণ একটি দীঘি ও একটি আখড়া। দীঘিটি প্রায় ১.৮ হেক্টর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। এর পাশেই একটি বিশাল নীলকুঠির স্থাপত্যিক ধ্বংসাবশেষ ও দুটি আকর্ষণীয় আখড়া রয়েছে। এছাড়া এখানে একটি কালী মন্দির ও একটি শিব মন্দির রয়েছে। স্থাপত্য রীতিতে খ্রি. আঠার-ঊনিশ শতকের ছাপ বিদ্যমান।

২. জঙ্গলবাড়ি জমিদার বাড়িঃ
কিশোরগঞ্জ শহর থেকে ১০ কিমি. উত্তর-পুর্ব দিকে করিমগঞ্জ উপজেলার নরসুন্দ নদী তীরে বনজঙ্গল ঘেরা একটি স্থান ‘জঙ্গলবাড়ি’ নামে খ্যাত। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী এ এলাকাটিকেই বারভুইয়া নেতা ঈশা খাঁ
দুর্গ হিসেবে ব্যবহার করতেন। তবে বর্তমানে অবশিষ্ট আছে কেবল উত্তর-দক্ষিণে লম্বা ইটের পাঁচিল দিয়ে ভাগ করা দুটি চত্বর। স্থানীয়দের নিকট পাঁচিলটি ‘প্রাসাদ প্রাচীর’ নামে পরিচিত। এর দক্ষিণ প্রান্তে একটি
তোরণ আছে। তোরণটির সামনে ‘করাচি’ নামে পরিচিত একটি পুর্বমুখী একতালা ভবন রয়েছে। এর উত্তরে একটি তিনগম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ আছে। তোরণের পিছনে ‘অন্দর মহল’ নামে একটি এক তলা দক্ষিণমুখী ভবন আছে। গোটা ইটের দেয়াল চুনকামসহ গথর লেপন দিয়ে ঢাকা। সম্পূর্ন নিরাবরণ । সামনে লম্বা একটি পুকুর আছে। মসজিদটির স্থাপত্যের মোগল প্রথাসিদ্ধ রীতির ছাপ রয়েছে।

৩. মসূয়া জমিদারবাড়ি (সত্যজিৎ রায়ের পৈত্রিক ভিটা):
কিশোরগঞ্জ জেলার অন্তর্গত কটিয়াদী উপজেলা শহর থেকে আনুমানিক ১০-১২ কিঃমিঃ দূরত্বে মসূয়া ইউনিয়নে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের ব্যক্তিত্ব সত্যজিৎ রায়ের স্মৃতি বিজড়িত মসূয়া জমিদার বাড়ি
অবস্থিত। বাড়িটি বর্তমানে প্রায় ভগ্নাবশেষে পরিণত হয়েছে। যে কোন সময় অবশিষ্টাংশও ধ্বসে পড়তে পারে। প্রধান বাড়ি সংলগ্ন কাচারী বাড়িটি বর্তমানে স্থানীয় ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। কাচারী বাড়ির ঠিক সম্মুখে একটি বড় পুকুর রয়েছে। পুরো এলাকাটি জমির পরিমান ৪.৩০ একর। বাড়িটির পিছনদিকে বেশ কিছু জমি প্রভাবশালী লোকজন দখল করে রাখছে।


খ) ধর্মীয়ঃ পর্যটন আকর্ষণঃ


১. শোলাকিয়া ঈদগাহঃ

বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত দেশের এই প্রাচীনতম ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হয়। কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পুর্বপ্রান্তে নরসুন্দা নদীর উত্তর তীরে অবস্থিত শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ঐতিহ্যবাহী এই জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঈশা খান মসনদ-ই-আলা জনৈক বংশধর দেওয়ান হায়বত খান কর্তৃক স্থাপিত হয়েছিল বলে অনেকে মনে করেন। কথিত আছে যে, এখানে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয় ১৭৫০ সালে। হায়বত খানের উত্তরসূরী দেওয়ান মান্নান দাদ খান পরবর্তীকালে ঈদগাহ চত্বরের বিপুল পরিমান জমি ওয়াকফ্ সম্পত্তি হিসেবে দান করেন। ঈদ উৎসব উপলক্ষে শোলাকিয়া ঈদগাহকে জমকালোভাবে সজ্জিত করা হয়। স্থানীয় হিসেব মতে এবং সংবাদপত্রের রির্পোট অনুযায়ী জামাতে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা অন্তত তিন লক্ষ।


২. চন্দ্রাবতীর শিব মন্দিরঃ
কিশোরগঞ্জ শহর থেকে ৫ কিঃমিঃ পুর্ব-উত্তর দিকে মাইজ খাপন ইউনিয়নের কাচারিপাড়া গ্রামে ফুলেশ্বরী নদীর তীরে এই মনোরম মন্দিরটি অবস্থিত। মধ্যযুগের প্রখ্যাত কবি চন্দ্রাবতী তথা বাংলার প্রথম মহিলা
কবির পিতা এই মন্দিরটি নির্মাণ করে ছিলেন। এই গ্রামেই চন্দ্রাবতীর জন্ম। এর দেয়ালে অসংখ্য পোড়ামাটি অলংকরণ একে সুশোভিত করে তোলেছে। ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক এ মন্দির দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রচুর দর্শনার্থীর আগমন ঘটে।

৩. শাদী মসজিদঃ
এগার সিন্দুরের দ্বিতীয় মসজিদটি ‘শাদী মসজিদ’ নামে পরিচিত। এটি দেশের অন্যতম সু-রক্ষিত মসজিদ। কেন্দ্রীয় মিহরাবের গায়ে সংযুক্ত একটি ফার্সি শিলা লিপি থেকে জানা যায়, মোগল সম্রাট শাহজাহান-এর
শাসন কালে জনৈক শাইখ শিরুর পুত্র শাদী ১০৬২ হিজরীতে (১৬৫২ খ্রি:) এই মসজিদ নির্মাণ করেন। বাইরে থেকে একে অষ্টকোণাকৃতি বলে মনে হবে। সামনের দিকে দেয়ালে এবং ভিতরে মিহরাবে পোড়ামাটির অলংকরণ দেখা যায়।

গ) নৌ-পর্যটন: পর্যটন আকর্ষণ

১. হাওড়ে নৌ-ভ্রমণঃ
কিশোরগঞ্জ জেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে পুরোনো ব্রহ্মপুত্রের মেঘনা, কালনী, ধনু, নরসুন্দা, মগড়া আর বাওলাই নদী। কিশোরগঞ্জ জেলা ঘুরে বেড়ানোর জন্য একটি আকর্ষণীয় জায়গা। শীতের সময়ে এখানকার হাওড় এলাকায় এক জায়গায় থেকে আরেক জায়গায় হেঁটে যাওয়া গেলেও বর্ষাকালে আরেক ধরণের মজা, এক জায়গায় থেকে আরেক জায়গায় নৌকায় যেতে হয়। কুলকিনারা পাওয়া যায় না এমনি এলাকা বিশেষ করে- ইটনা, মিটামইন,  নিকলী । ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে বাজিতপুর নেমে সেখানে ট্রলার অথবা ভাড়া নৌকায় ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন হাওর-বাওড় দেখা যায়।

ঘ) প্রাকৃতিকঃপর্যটন আকর্ষণঃ

১. হাওর ও বিলঃ
কিশোরগঞ্জকে বলা হয় ভাটির দেশ। অনেক গুলি হাওর ও বিল রয়েছে এ জেলায়। হাওর এলাকায় সবুজ শ্যামল বাংলার আসল চিত্র খোঁজে পাওয়া যায়। কোন চিত্রকর এসে বুঝি প্রকৃতিকে এমনিভাবে সাজিয়ে দিয়েছে। কিশোরগঞ্জ জেলার সব হাওরই আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট। কিশোরগঞ্জ শহর থেকে ট্রলারে করে ১৪ কিমি. দুরত্বে অবস্থিত সময় লাগে ২ ঘন্টা। ইটনা উপজেলার পাশে ধনু নদী। এখান থেকে হাওর শুরু। হাওরের পূর্ব দিকে সুরমা নদী। বর্ষা মৌসুমে গোটা হাওর সয়লাব হয়ে যায়। বেশীর ভাগ স্থান খাল বিল (জল মহল) ও খাই-খন্দরে ভরা থাকলেও বাকী অংশ শ্যামল ফসলী জমি। প্রতিটি গ্রাম হিজল তমাল ও মাদার গাছে ছাওয়া। বেশীর ভাগ লোক কৃষিজীবি নয়তো মৎস্যজীবি। কেউ কেউ আবার ধনু নদীর তলা থেকে মাটি তুলে মোঠা বানায়। মৎস্যজীবিরা দিনে ও রাতে সমান তালে মাছ ধরে। সেজন্য রাতে হাওরে বিভিন্ন অংশ হেজাকের আলোতে উদ্ভাসিত থাকে।

ঙ) গ্রামীণ, কৃষি ও স্থানীয় ঐতিহ্যঃ পর্যটন আকর্ষণঃ

১. নৌকা বাইচঃ
ভৈরবের মেঘনা নদীতে প্রতিবছর ভৈরব ছাতিয়ানতলা থেকে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার পথে এ নৌকা বাইচ হয়।