Wellcome to National Portal
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

ফরিদপুর জেলা

ক) ঐতিহাসিক, প্রত্নতাত্ত্বিক ও স্থাপত্য নিদর্শন : পর্যটন আকর্ষণ :


১. পল্লীকবি জসিমউদ্দিনের বসতবাড়ি(অম্বিকাপুর) :
শহরের সন্নিকটে অম্বিকাপুর-তাম্বুলখানায় কুমার নদীর পাড়ে কবি জসিমউদ্দিনের বাড়ি। গেট পেরুলেই প্রথমে নজরে পড়বে ডালিমগাছ সংলগ্ন কবির কবর। কবরস্থানের পরে পেছনে চার ভিটায় চারটি ঘর রয়েছে। তিনদিকে তিনটি টিনের ঘর এবং সামনের দিকে নানান জাতের ফুলের গাছগাছালিতে ঘেরা ছোট দোচালা টিনের ঘর। এটাই কবির বসতঘর। বসতঘরের পাশেই “মনিমালার মনিহার জাদুঘর” নামে কবি গৃহিণীর প্রতিষ্ঠিত একটি প্রদর্শনীশালা। এতে প্রদর্র্শিত রয়েছে কবির জীবদ্দশায় ব্যবহৃত বিবিধ নিদর্শন, আলোকচিত্র ও পান্ডুলিপি। কাছেই পদ্মা নদী। নদীর পাড়ে পাকা ঘাটের সিঁড়ি সোজা নদীর তলায় নেমে গেছে। দূরে কবির পছন্দের জায়গাগুলো এক একটি নাম যেমনঃ রাখালী ছায়াঘর, রূপালী ছায়াঘর, সাজু ছায়াঘর ইত্যাদি নামে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। এছাড়া রয়েছে ‘জসিম মঞ্চ’ নামে একটি নাট্য মঞ্চ। সরকারী প্রকল্পের আওতায় পল্লী কবি সংগ্রহশালা নির্মিত হচ্ছে।


২. উজানী রাজবাড়ী :
কুমার নদীর তীরে অবস্থিত ফরিদপুর। সবুজ শ্যামলিমায় আচ্ছন্ন ফরিদপুর। কুমার নদী ফরিদপুর হয়ে দীর্ঘপথ এঁকেবেঁকে মুকসুদপুরে চলে গেছে। এ নদীর এক পাড়ে রয়েছে উজানী রাজবাড়ী।


৩. মহাকবি আলাউলের জন্মস্থান :
ফরিদপুর জেলার অন্তর্গত ফতেয়াবাদ পরগণার জালালপুরে ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দে মহাকবি আলাউলের জন্ম। ফরিদপুরের ফতেয়াবাদে এখন আর আলাউলের স্মৃতিচিহ্ন পাওয়া যায় না। তিনি ‘তোহফা’ আর ‘পদ্মাবতী’
কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন। ১৬৭৩ সালে কবি আলাউল মারা যান।


৪. জাদুঘর:

জেলা পরিষদ চত্বরে রয়েছে একটি ছোট্র জাদুঘর। জাদুঘর ভবনটি এর স্থাপত্যের জন্য আকর্ষণীয়। এক কোঠা বিশিষ্ট এ জাদুঘরটি আট ধার বিশিষ্ট ভূমি পরিকল্পনায় নির্মিত। এর ভিতর ফরিদপুর অঞ্চল থেকে
সংগৃহীত বিভিন্ন নিদর্শন প্রদর্শিত আছে। নিদর্শনাদির মধ্যে কালো পাথরে উৎকীর্ণ একটি স্থান বিষ্ণু (খ্রিস্টাব্দ এগার-বার শতক), একটি হাত কামান (খ্রিস্টাব্দ সতের -আঠার শতক), পুঁথি, তিনটি কাঠের নারী
মূর্তি (খ্রিস্টাব্দ বিশ শতক), দুটি পাথরের শিবলিঙ্গ, মুদ্রা, নোট, ডাকটিকেট, মুক্তিযুদ্ধের কিছু স্মারক সূত্র প্রভৃতি অন্যতম আকর্ষণ।


৫. ফতেহাবাদ টাকশাল :
আধুনিক ফরিদপুর শহরের সাথে অভিন্ন এবং গোয়ালন্দ স্টিমার ঘাট থেকে ২০ মাইল দূরে পদ্মার একটি পুরাতন শাখার (মরাপদ্মা নামে পরিচিত) তীরে অবস্থিত। সুলতান জালালুদ্দীন মুহম্মদ শাহ এর (১৪১৫-১৪৩৩) শাসনামলে টাকশাল শহর হিসেবে প্রাথমিক পর্যায়ে এটি গড়ে ওঠে। রুকনুদ্দীন বারবক শাহ (১৪৫৯-১৪৭৪) এবং তাঁর পুত্র শামসুদ্দীন ইউসুফ শাহ রৈ (১৪৭৬-১৪৮১) সময়টুকু ছাড়া বাংলার স্বাধীন সুলতানদের আমলে টাকশাল হিসেবে শহরটির মর্যাদা অক্ষুন্ন ছিল। পরবর্তীকালে আজমীরের খাজা মঈনুদ্দীন চিশতির শিষ্য এবং বিখ্যাত দরবেশ শাহ ফরিদউদ্দীন মাসুদের নামে ফতেহাবাদের নতুন নাম দেওয়া হয় ফরিদপুর। তিনি এ শহরে তাঁর আস্তানা প্রতিষ্ঠা করেন।


৬. বাইশরশি জমিদার বাড়ি :
ফরিদপুর জেলার সদর উপজেলার বাইশরশি গ্রামে এর অবস্থান। এখানে একটি প্রাচীর ঘেরা অঙ্গনে পাশাপাশি দুটি দোতলা ভবন রয়েছে। প্রত্যেকটি ভবনের সাথে রয়েছে একটি ছোট মন্দির। অতীতে এ মন্দিরগুলোতে ঘটা করে দূর্গাপূজা উদযাপিত হতো। ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্যকলায় প্রায় আধুনিক আকারের ইট ও সুরকি দিয়ে তৈরি মন্দিরগুলোর অন্যতম আকর্ষণ হলো লতাপাতার নিখুঁত কারুকাজ।


৭. মথুরাপুর দেউল :
কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার গাজনা ইউনিয়নে অবস্থিত মথুরাপুর দেউল। দেউলটির পশ্চিমেই রয়েছে চন্দনা নদী। কবে, কি উদ্দেশ্যে কারা এটি নির্মাণ করেছিলেন তার সঠিক তথ্য বা ইতিহাস কারও জানা নেই। তবে ০.৪০ একর জমির উপর কারুকাজ খচিত প্রায় ৯০ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট এ দেউলটির গাঁয়ের টেরাকোটার দৃষ্টিনন্দন ও শৈল্পিক কাজ ও স্থাপত্যশৈলীর মুন্সীয়ানা বলে দেয় এটি মোগল আমলের কীর্তি। দেউলটির শরীর জুড়েই রয়েছে শিলাখন্ডের ছাপচিত্র, রয়েছে মাটির ফলকের তৈরী অসংখ্য ছোট ছোট মূর্তি, যা দর্শনার্থীদের করছে আকৃষ্ট তাঁদের মনোজগতকে দিচ্ছে নাড়া আর জানার কৌতূহলকে দিচ্ছে উস্কে। শিলাখন্ড আর পোড়ামাটির তৈরি নান্দনিক এসব ফলক দেউলটির গায়ে এমনভাবে গাঁথা রয়েছে যে, কিভাবে কোথা থেকে এর নির্মাণশৈলী শুরু হয়েছে তা বোঝার কোন উপায় নেই। এতটাই নিখুঁতভাবে এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে, যা দেখে দর্শনার্থীরা হতবাক হয়ে পড়ে। ভেতরে প্রবেশ করার জন্য দক্ষিণদিকে একটি মাত্র খিলান দরজা রয়েছে। খিলানের মুখ খাঁজকাটা। এ স্থাপনায় হিন্দু ও মুসলিম স্থাপত্যকলার ধারা নিপুণভাবে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। দেউলটি সম্পর্কে বিভিন্নজন বিভিন্ন মত পোষণ করেন। তবে কথিত আছে যে, বারভূঁইয়া নেতা ভূষণার রাজা মুকুন্দরাম ফতেহগঞ্জপুরে মোগল সেনাবাহিনীর নিকট পরাজিত হলে মোগল সেনাপতি সংগ্রাম সিংহ তাঁর বিজয়ের স্মৃতিকে স্মরনীয় করে রাখার উদ্দেশ্যে এটি নির্মাণ করেছিলেন। এটির স্থাপত্য শৈলীতে খ্রিষ্টীয় ষোল-সতের শতকের প্রথাসিদ্ধতার ছাপ বিদ্যমান। মথুরাপুর দেউল বাংলাদেশের স্থাপত্যের এক অপূর্ব কীর্তি যা মধ্যযুগের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।               

খ) ধর্মীয় : পর্যটন আকর্ষণ :

১. সীতানাথ আশ্রম :
ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ গ্রামে এর অবস্থান। এখানে মোট ৫টি পুরাতন মন্দিরসহ একটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শন করা যায়। অক্ষত থাকা ৫টির মধ্যে ২টি এক-কোঠা ও এক চূড়া বিশিষ্ট।
সবচেয়ে বড়টি ৩ মিটারের বেশি উঁচু। সুরকির মসলায় নানান আকারের ইট গেঁথে এগুলো তৈরী হয়েছে। একটি মন্দিরে লক্ষ্মীনারায়ণ ও গৌরনিতাইর পূজা হয়। সময়ব্যাপ্তি উনিশ-বিশ শতক খিৃষ্টীয় সাল।

গ) সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক : পর্যটন আকর্ষণ :


১. রাজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ :
বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার সবচেয়ে পুরাতন কলেজ। কলেজটি ১৯১৮ সালে প্রখ্যাত কংগ্রেস নেতা অম্বিকাচরণ মজুমদারের উদ্যোগে ২৯জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে প্রথম এর পদচারণা শুরু হয়। বাইশরশির জমিদার রাজেন্দ্র রায়চৌধুরীর নামে কলেজটির নামকরণ করা হয়। ১৯৭২ সালে প্রধান ক্যাম্পাস থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বায়তুল আমান নামক স্থানে কলেজের নতুন ভবন নির্মিত হয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে কলেজের গৌরবময় ভূমিকা রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের এ কলেজের ছাএদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। এ কলেজের কতিপয় ছাত্র জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুনাম অর্জন করেছেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন কবি জসীম উদ্দিন, লেখক নরেন্দ্রনাথ মিত্র ও নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, শিক্ষাবিদ এস.এন.কিউ জুলফিকার আলী ও বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মৃণাল সেন।


২. নদী গবেষণাগার :
নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি স্বায়ত্ত্বশাসিত জাতীয় প্রতিষ্ঠান। নদী গবেষণা ইনষ্টিটিউট দেশের বিভিন্ন পানিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ, নক্শা প্রণয়ন এবং ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা প্রদান করে থাকে। নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৭ সালে এবং ১৯৮৪ সালে এটি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বিডব্লিউডিবি) হাইড্রোলিক গবেষণাগার হিসেবে পরিবৃদ্ধি লাভ করে। ১৯৯১ সালের ২০ আগস্ট এই ইনস্টিটিউট এক অধ্যাদেশ বলে (অধ্যাদেশ নং- ৫৩, জুলাই ১৯৯০) বিডব্লিউডিবি থেকে পৃথক হয়ে একটি জাতীয় ’স্বায়ত্ত্বশাসিত
প্রতিষ্ঠানে’ পরিণত হয়। ফরিদপুর শহরের উপকন্ঠে এ প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তর অবস্থিত। 


ঘ) উৎসব সম্পর্কিত : পর্যটন আকর্ষণ :


১. অম্বিকাপুরের জসীম মেলা :
ফরিদপুর শহরের এক প্রান্তে অম্বিকাপুর। এখানে রয়েছে পল্লীকবি জসীমউদ্দিনের বাড়িঘর, কবরস্থান, ‘জসিম মঞ্চ’ নামে নাট্য মঞ্চ। এ মঞ্চকে ঘিরে প্রতি ডিসেম্বর-জানুয়ারী মাসে ১৫ দিনের জন্য মেলা বসে যার
নাম ‘জসিম মেলা’।

ঙ) প্রাকৃতিক : পর্যটন আকর্ষণ

১. কুমার নদীর প্রাকৃতিক দৃশ্য :
ফরিদপুরের শহরের উপর দিয়ে বয়ে গেছে কুমার নদী। সবুজ শ্যামলীমায় আচ্ছন্ন ফরিদপুর। কুমার নদী ফরিদপুর হয়ে দীর্ঘপথ এঁকেবেঁকে মুকসুদপুরে চলে গেছে। এই নদীর উপর রয়েছে কয়েকটি ব্রীজ। ব্রীজে দাঁড়িয়ে নদীর দু’কূলের দৃশ্য উপভোগ করা যায়। এ কুমার পাড়ের একটি জায়গার নাম সোজন বাদিয়ার ঘাট।


২. পদ্মা, আড়িয়ালখাঁ ও মধুমতী নদী :
এছাড়া রয়েছে পদ্মা, আড়িয়ালখাঁ আর মধুমতি নদী। কুমার নদীর বিভিন্ন শাখা গিয়ে মিশেছে পদ্মায়। পল্লীকবি জসিম উদ্দিনের যখন যৌবন তখন এ প্রমত্তা পদ্মার ছিল ভরাযৌবন। পদ্মা নদী বর্ষায় কিছুটা হলেও যৌবন ফিরে পায়। বিল-ঝিল, হাওড়ে তখন থাকে অথৈ পানি।