Wellcome to National Portal
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ১st মার্চ ২০২০

দিনাজপুর জেলা

ক) ঐতিহাসিক, প্রত্নতাত্ত্বিক ও স্থাপত্য নিদর্শন

পর্যটন আকর্ষণের নাম ও বর্ণনা

সীতাকোট বিহার:

দিনাজপুর জেলার নওয়াবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত এই বৌদ্ধ বিহারটি পূর্ব-পশ্চিমে ৬৫.২৩ মিটার ও উত্তর-দক্ষিণে ৬৪.১১ মিটার দীর্ঘ। বিহারটিতে মোট ৪১টি প্রায় সমআয়তনের কক্ষ ছিল। এই কক্ষগলি একটি প্রশস্ত টানা বারান্দার সংগে যুক্ত ছিল। সীতাকোট বিহার আঙ্গিনার মধ্যবর্তী স্থানে কোন প্রধান মন্দির ছিলনা। এখানে পাহাড়পুর,শালবন বিহার এবং আনন্দ বিহারের মত ঐতিহ্যবাহী পোড়ামাটির ফলক দেখা যায়না। তবে আকার আয়তনের দিক থেকে এই বিহারের সংগে বগুড়ায় অবস্থিত ভাসু বিহার এর অনেক মিল রয়েছে। সীতাকোট বিহার থেকে প্রাপ্ত দুইটি ব্রোঞ্জ মূর্তির গঠন শৈলী থেকে অনুমান করা যায় যে, এগুলি ৭ম-৮ম শতাব্দীতে তৈরী ।

দিনাজপুর রাজবাড়ি:

দিনাজপুর শহরের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত এই রাজ বাড়িটি। মূল মহল ও সংলগ্ন পরিখা সম্ভবত অষ্টাদশ শতাব্দীতে মহারাজা প্রাণনাথ ও তাঁর পোষ্যপুত্র রামনাথ নির্মাণ করেছিলেন। প্রায় ১৬.৪১ একর এলাকার উপর প্রাসাদটি নির্মিত হয়েছিল  ইউরোপীয়, মুসলিম ও হিন্দু রীতির  অদ্ভুত সংমিশ্রণে। মূল প্রাসাদ ভবনটি আয়না মহল, রাণী মহল ও ঠাকুর বাড়ি নামে পরিচিত তিনটি প্রধান মহলে বিন্যস্ত।

আয়না মহল নামে পরিচিত পূর্বমুখি দ্বিতল প্রাসাদটির অধিকাংশই ধবংসপ্রাপ্ত। পশ্চিমের মূল প্রসাদ ব¬কের পেছনে রয়েছে রাণী মহল ও ঠাকুরবাড়ি মহলের দ্বিতল বর্গাকার ব¬ক। এ সমস্ত অসাধারণ সুন্দর নিদর্শনের রিলিফ, খোদিত নকশা ও অন্যান্য মূল্যবান বস্তুই বর্তমানে ধবংসপ্রাপ্ত।

ঘোড়াঘাট দূর্গ ও  মসজিদ

দিনাজপুর জেলার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এবং ঘোড়াঘাট দূর্গের দক্ষিণ পূর্ব কোনে এর অবস্থান। ঘোড়াঘাট দুর্গ অভ্যন্তরে বেশকিছু ধমীয় ও ঐতিহাসিক ইমারত নির্মিত হয়েছিল। সেগুলির মধ্যে কেবল ধবংসোন্মুখ অবস্থায় মসজিদটি এবং ইতস্তত বিক্ষিপ্ত কয়েকটি ঢিবিই টিকে আছে।  শীলালিপি অনুসারে ঘোড়াঘাটের মোঘল ফৌজদার জয়নাল আবেদীন ১৭৪০-৪১ সালে মসজিদটি নির্মাণ করেন।মসজিদটি বর্তমানে প্রায় ধবংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। এর সামনের বাঁধানো অঙ্গন বর্তমানে জঙ্গলে ছেয়ে গেছে।

খ) ধর্মীয়

পর্যটন আকর্ষণের নাম ও বর্ণনা

সুরা মসজিদ:

দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৬ কিঃমিঃ দূরে এর অবস্থান। ইট ও পাথরে নির্মিত মসজিদটির  চার পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বেশ কিছু সংখ্যক প্রস্তরফলক। মসজিদের দেয়ালগুলির বহির্গাত্রের অলঙ্করণে শিকল ও ঘন্টার ঐতিহ্যগত মোটিভ অঙ্কিত পোড়ামাটির অলঙ্করণ রয়েছে। তবে জ্যামিতিক আকৃতির কিছু নকশাও দেখতে পাওয়া যায়।এক গম্বুজবিশিষ্ট বর্গাকার এই মসজিদের সম্মুখভাগে তিন গম্বুজ বিশিষ্ট একটি বারান্দা রয়েছে।মসজিদটি একটি উঁচু চত্বরের উপর নির্মিত।মসজিদটি তৈরীতে ইট ব্যবহার করা হলেও এর ৭৫ ভাগ কাজই কাল পাথর দিয়ে করা হয়েছে। নির্মাণ শৈলীর ভিত্তিতে মসজিদটিকে হোসেন শাহী আমলের বলে মনে করেন।

নয়াবাদ মসজিদ

দিনাজপুর জেলা সদর হতে ২০ কিঃমিঃ উত্তর-পশ্চিমে কাহারোর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের নয়াবাদ গ্রামে অবস্থিত। বর্তমান প্রতœতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক মসজিদটি সংস্কার করা হয়েছে। মসজিদের প্রবেশদ্বারের উপরে ফারসি ভাষায় রচিত লিপি থেকে জানা যায় যে, সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সময় ১৭৯৩ খ্রি মসজিদটি নির্মিত ছিল। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি আয়াতাকার। এর চারকোনায় রয়েছে চারটি অষ্টভূজাকৃতির টাওয়ার। মসজিদে প্রবেশের জন্য পূর্ব দিকে রয়েছে তিনটি খিলান। মসজিদের সমস্ত দেয়াল জুড়ে আয়তাকার  বহু পোড়ামাটির ফলক রয়েছে।

কান্তজীর মন্দির :

দিনাজপুর শহর থেকে ১২ মাইল উত্তরে এবং দিনাজপুর-তেঁতুলিয়া সড়কের প্রায় ১ মাইল পশ্চিমে ইটের তৈরী অষ্টাদশ শতাব্দীর স্থাপত্য। দিনাজপুর মহারাজ প্রাণনাথ  ১৭২২ সালে এ মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন এবং মহারাজের দত্তকপুত্র মহারাজ রামনাথ ১৭৫২ সালে মন্দিরটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন। বাংলার স্থাপত্য সমূহের মধ্যে বিখ্যাত এই মন্দিরটি বিশিষ্টতার অন্যতম কারণ হচ্ছে পৌরাণিক কাহিনীসমূহ পোড়া মাটির অলংকরণে দেয়ালের গায়ে ফুটে উঠেছে। এ নবরত্ন বা ‘নয় শিখর’ যুক্ত হিন্দু মন্দিরের চূড়া হতে আদি নয়টি শিখর ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশের সর্বৎকৃষ্ট টেরাকোটা শিল্পের নিদর্শন রয়েছে।  ৫২ফুট আয়তনের বর্গাকৃতির মন্দিরটি একটি আয়াতাকার প্রাঙ্গনের উপর স্থাপিত। এর চারিদিকে রয়েছে পূজারীদের বসার স্থান। বর্গাকার প্রধান প্রকোষ্ঠটিকে কেন্দ্র  করে ইমারতটি নির্মিত হয়েছে। পাথরের ভিত্তির উপর দাঁড়ানো মন্দিরটির উচ্চতা ৫০ ফুটেরও বেশী। ভিত্তি থেকে শুরু করে মন্দিরের চূড়া পর্যন্ত ভিতর ও বাইরের দেয়ালের প্রতি ইঞ্চিতে পৌরাণীক কাহিনীর অনুসরণে মনুষ্য মূর্তি ও প্রাকৃতিক বিষয়াবলী বিষ্ময়করভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মহাভারত ও রামায়ণ এর বিস্তৃত কাহিনী এবং অসংখ্য পাত্রপাত্রীর বিন্যাস ঘটেছে এখানে।  কেউ যদি মন্দির দেয়ালের অলঙ্করণের দৃশ্য যে কোন দিক থেকে গভীর মনোযোগের সাথে দেখেন এবং এর বিষয়বস্তুকে সমন্বিত করেন তবে এর বিষয় বৈচিত্র দেখে অবাক ও বিষ্ময়ে অভিভূত হবেন ।

দারিয়া মসজিদঃ

দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার ১৫ কিঃমিঃ পূর্বে দরিয়া গ্রামে মসজিদটি অবস্থিত।গঠনরীতি অনুযায়ী মসজিদটি মোগল আমলের শেষ দিকে নির্মিত বলে ধারণা করা হয়। সংস্কারের অভাবে মসজিদটি জরাজীর্ণ তিনটি গম্বুজ ও পোড়ামাটির ফলক  ধবংসপ্রায় । মসজিদের ভিত্তদেশ নিচে তলিয়ে গেছে। পূর্বদিকের দেয়াল প্যানেল দিয়ে সুন্দরভাবে অলংকৃত। এসব প্যানেলে ফুল,লতাপাতা,ঘোড়া,জোড়া ময়ূর, হাতির নকশার পোড়ামাটির ফলক স্থাপিত রয়েছে। সাধারণত মসজিদের গায়ে  কোন জীবজন্তুর নকশা থাকেনা, এক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম দেখা যায়।

গ) বিনোদনমূলক

পর্যটন আকর্ষণের নাম ও বর্ণনা

রামসাগরঃ

দিনাজপুর শহর থেকে  প্রায় ৮ কিঃমিঃ দক্ষিণে বাংলাদেশের বৃহত্তম মানবসৃষ্ট এই দীঘি অবস্থিত। ইতিহাস থেকে জানা যায়, পলাশী যুদ্ধে প্রাক্কালে রাজা রামনাথ দীঘিটি খনন করিয়েছিলেন। আশপাশের গ্রামবাসীদের পানি সরবরাহের উদ্দেশ্যে দীঘিটি খনন করা হয়। রাজা রামনাথ সম্ভবত দুর্ভিক্ষপীড়িত অধিবাসীদের দুর্দশা লাঘবের উদ্দেশ্যে ‘কাজের বিনিময়ে খাদ্য’ কর্মসূচির ভিত্তিতে দীঘিটি খননের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। মূল দীঘিটি উত্তর-দক্ষিণে ১০৭৯ মিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১৯২.৬ মিটার। দীঘিটির গভীরতা প্রায় ৯.৫ মিটার। দীঘির পশ্চিম পাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে একটি ঘাট ছিল। যার অবশিষ্ট এখনও বিদ্যমান।

 

ঘ) উৎসব সম্পর্কিত

পর্যটন আকর্ষণের নাম ও বর্ণনা

বৈশাখী মেলা :

দিনাজপুর জেলার নেকর্মদানে বৈশাখের প্রথম দিন হতে সপ্তাহব্যপী এই মেলা বসে যা উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ মেলা। দুরদুরান্ত হতে লক্ষাধিক ক্রেতা-বিক্রেতার ও দর্শনার্থীর আগমন ঘটে।। বিভিন্ন ধরনের দেশীয়, লোকজ পণ্য, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পজাত পণ্যসামগ্রী ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় জিনিস এ মেলায় পাওয়া যায়। নাচ, গান, যাত্রা, পুতুলনাচ, বিভিন্ন ধরনের খেলাধূলাসহ নানান বিনোদনের আয়োজন করা হয়।