ক) ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্বিক ও স্থাপত্য নিদর্শনঃ
পর্যটন আকর্ষণের নাম ও বর্ণনাঃ
১. সাবেক ডাঙ্গা পূরাকীর্তিঃ
বাগেরহাট শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার উত্তর পূর্বে একটি বিচিত্র ধরনের দোচালা ইমারত আছে। ইমারতের ভিতরে কোতাবেদী বা মিহরাবের অস্তিত্ব ছিলনা। ইমারতের দেয়ালের উপর ছিল বিভিন্ন জীবজন্তু ও প্রাণী জগতের চিত্তাকর্ষক টেরাকোটা ফলক এবং এসব ফলকে শৃগালসহ বিভিন্ন প্রাণীর মূর্তি উৎকীর্ণ আছে ইমারতটিকে হাল আমলে মসজিদে রূপান্তর করা হয়েছে। জীবজন্তুর টেরাকোটা ফলকে অলংকৃত ইমারতটি হিন্দুদের ইমারত ছিল তা সন্দেহ নেই।
২. কোদলা মঠঃ
বাগেরহাট থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার উত্তরে ও যাত্রাপুর রেল ষ্টেশন থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার পূর্ব দিকে ভৈরব নদীর পূর্বতীরে কোদলা গ্রামে এই মঠ অবস্থিত। এটিকে অযোধ্যার মঠ ও বলে থাকে। মঠে ব্যবহৃত পলিস করা লাল ইটগুলো অতি উঁচু মানের। দক্ষিণ দিকে এর প্রধান প্রবেশ পথ। মঠের বর্তমান উচ্চতা ১৯.৫৪ মিটার ক্রমশ সামান্য সরু হয়ে মঠের শিখর উপরের দিকে উঠে গেছে এবং এই উপরের দিকে উঠার মধ্যে যে মৃদু বাঁক আছে তা মঠের সৌন্দর্য্যকে বৃদ্ধি করেছে। শীর্ষদেশ ফ্লাট হলেও তাতে একটি কমনীয় গাম্ভীর্যতা আছে। এ মঠের বিশেষ আকর্ষণীয় বস্তু হচ্ছে এর বাহিরের অলংকরণ। উড়িষ্যা অঞ্চলে খ্রীষ্টিয় ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত যে “রেখা” স্টাইলে মন্দির নির্মাণ পদ্ধতি দেখা যায় তাঁর প্রভাব এই মঠে আছে বলে ধারণা করা হয়। এই মঠে শিল্প কলার উন্নতমানের প্রশংসা করেছেন বিখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ ডক্টর সৈয়দ মাহমুদুল হাসান। মঠের গায়ে একটি খোদিত লিপি আছে।
খ) ধর্মীয়ঃ
পর্যটন আকর্ষণের নাম ও বর্ণনাঃ
১. ষাট গম্বুজ মসজিদঃ
আভিধানিকভাবে ষাট গম্বুজ মসজিদ অর্থ হলো ষাটটি গম্বুজ সম্বলিত। বাংলাদেশের প্রাচীন মসজিদগুলোর মধ্যে বৃহত্তম এবং সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিম স্থাপত্যের অন্যতম চিত্তাকর্ষক নিদর্শন। খান আল-আজম উলুগ খান জাহান, তিনি দক্ষিণ বাংলার বিশাল অংশ জয় করে তৎকালীন সুলতান নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহের (১৪৩৫-৫৯) সম্মানে বিজিত অঞ্চলের নামকরণ করেন খলিফাতাবাদ। খান জাহান ১৪৫৯ তার মৃত্যু পর্যন্ত হাভেলী খলিফাতাবাদ থেকে উক্ত অঞ্চল শাসন করেন। বিংশ শতাব্দীর আশির দশকের শুরুতে ইউনেস্কোর উদ্যোগে এই ঐতিহাসিক পুরাকীর্তিটির রক্ষনাবেক্ষণের এক কার্যকরী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে যা বর্তমানে শেষ পর্যায়ে।
২. নয় গম্বুজ মসজিদঃ
ঠাকুরদিঘির পশ্চিমপাড়ে খান জাহানের স্মৃতিসৌধের দক্ষিণ-পূর্বে আধা কিলোমিটারেরও কম দুরত্বে এটি অবস্থিত। ইটের তৈরী বর্গাকৃতির মসজিদটি পাথরের স্তম্ভ যা গম্বুজকৃত ছাদের ভার বহন করছে। পোড়ামাটির শ্রমলব্ধ অলংকার কর্ম বর্তমানে কেবল খিলানপথ মেহরাব বুরুজ ও কার্ণিশের মধ্যেই তার অস্তিত্ব বজায় রয়েছে। নির্মাণ শৈলীর দিক থেকে মসজিদটি খান জাহানের সময়ের। ঠাকুরদিঘির পাড়ে খান জাহানের এক কর্মকর্তা মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। বর্তমানে মসজিদটি বাংলাদেশ প্রত্নতাত্বিক বিভাগের অধীনে পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষিত।
৩. জিন্দাপীর সমাধি কমপ্লেক্সঃ
বাগেরহাট খান জাহানের সমাধির পশ্চিমে আধাকিলোমিটারেরও কম দুরত্বে অবস্থিত। জিন্দাপীরের প্রকৃত নাম আহমদ আলী। সমাধিটি ইটের তৈরী। কবরের নীচে জিন্দাপীর সমাহিত। সমাধিটি নির্মাণ শৈলীর বিচারে ইলিয়াস শাহী বা হোসেন শাহী সময়ের ধরা যেতে পারে (আনুমানিক পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষোর্ধ অথবা ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম দিকে)।
৪. চুনখোলা মসজিদঃ
বিবি বেগিনীর মসজিদ থেকে প্রায় ৪৭০ মিটার উত্তর-পশ্চিমে চুনাখোলা গ্রামে একটি মাঠের মধ্যে এই প্রাচীন মসজিদটি অবস্থিত। চারদিকে চাষের জমির মাঝখানে লোকালয়ের বাইরে এই ভগ্ন মসজিদের অস্তিত্ব যেন নিঃসঙ্গতার বেদনার প্রতীক। এখানে এককালে সম্ভবত (১৯৭৫ খ্রিঃ) বসতি ছিল। এখন লোকালয় বেশ দূরে (১৯৭৫ খ্রিঃ)। খান-ই-জাহানী আমলের স্থাপত্য শিল্পের এই মূল্যবান মসজিদটিকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ইতোমধ্যে সংস্কার করেছে বলে জানা গেছে।
৫. রেজাখোদা মসজিদঃ
জিন্দাপীরের মাজারের প্রায় ১৫০ মিটার পশ্চিমে একটি মাঝারী আকারের মরে যাওয়া পুকুরের পশ্চিম পাড়ে একটি মাঝারী আকারের মসজিদের ধবংসাবশেষ আছে। মসজিদের লাগোয়া পূর্বদিক দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে লম্বা প্রশস্ত রাস্তা আছে। রাস্তার সঙ্গেই আছে একটি বিরাট তোরণের ধবংসাবশেষ। ১.৭৮ মিটার পুরু দেয়ালের কিছু কিছূ অংশ এখানে-ওখানে এখনও দেখা যায়। উপরে ৬টি ও ৪টি অষ্টকোণার মিনার ছিল বলে ধারণা করা হয়। খান-ই-জাহানী গঠন প্রণালী অনুযায়ী খুব সম্ভব এ মসজিদটি হোসেন শাহ্ বা নূসরাত শাহ্ আমলে নির্মিত হয়েছিল।
৬. পীর আলীর সমাধিঃ
খান-ই-জাহানের মাজারের পশ্চিম দরজা থেকে কয়েক গজ পশ্চিমে কৃষ্ণ প্রস্তর নির্মিত একটি সমাধি দেখা যায়। খান-ই-জাহানের সমাধির মতো এটি প্রস্তর নির্মিত এবং ১২/৭ ফুট আয়তনের বেদীর উপরে ৩ স্তবকে নির্মিত। পীর আলী খান-ই-জাহানের বিশেষ প্রিয়পাত্র ও জামাতা ছিলেন। পূর্বে পীর আলী ব্রাহ্মন সন্তান ছিলেন এবং নাম ছিলো গোবিন্দলাল রায়। পরে মুসলিম হয়েছিলেন। খান-ই-জাহানের সমাধি ভবনের পাশেই পীর আলীর সমাধি এবং তাঁর কবরের উপর খান-ই-জাহান কর্তৃক স্থাপিত শিলালিপিটি দেখে বোঝা যায় তিনি পীর আলীর অত্যন্ত প্রিয় পাত্র ছিলেন। কবরের নীচে একটি সুড়ঙ্গ পথ আছে।