ক) ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্বিক স্থাপত্য ও পর্যটন আকর্ষণের নাম ও বর্ণনা :
১. স্যার প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের বাড়ী :
কাসিমপুর ও রেজাকপুর গ্রামে কপোতাক্ষ নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে অসংখ্য খোলামকুচি, পোড়ামাটির খেলনা এবং স্থাপত্যের ধবংস চিহ্ন পাওয়া যায়। এই অঞ্চলে একটি প্রাচীন শহরের অস্তিত্ব ছিল। এখানে বিজ্ঞানী স্যার প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের বাড়ী ভ্রমণ করা যায়। সেখানে রয়েছে বড় বড় দালান কোঠা, মন্দির, দিঘী প্রভৃতি।
খ) ধর্মীয়:
পর্যটন আকর্ষণের নাম ও বর্ণনা :
১. বুড়াখার মসজিদ :
এটি একটি নয় গম্ভুজ মসজিদ। ভেতরে রয়েছে পাথরের থাম ও কারুকাজ করা মেহরাব। দেয়ালে গতর লেপনের পরিবর্তে কোন কোন জায়গায় কারুকার্যের ইটের চমৎকার অলংকরণ রয়েছে। এর স্থাপত্যশৈলীতে খ্রিষ্টীয় পনের শতকের প্রথাসিদ্ধতা বজায় রয়েছে। কয়রা উপজেলার মসজিদকুর গ্রামে কপোতাক্ষ নদীর কাছে মসজিদটি অবস্থিত। খুলনা থেকে বাসে পাইকগাছা হয়ে তিন ঘন্টা সময় লাগে।
২. বুড়াপীরের মাজার :
খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কের পাশ্বে গল্লামারী নামক স্থানে বুড়াপীরের মাজার অবস্থিত।
৩. মহেশ্বর পাশা মন্দির :
পোড়ামাটির কারুকাজ এ মন্দিরের আকর্ষণ।
৪. কালী মন্দির :
এটি “কালী মন্দির” নামে পরিচিত একটি চমৎকার ঐতিহাসিক মন্দির। সম্পূর্ণ ইট ও সুরকী দিয়ে নির্মিত এবং কোঠা বিশিষ্ঠ এ মন্দিরের দেয়ালে শোভাবর্ধক ইটের অপূর্ব কারুকাজ রয়েছে।
৫. মসজিদ কুড় মসজিদঃ
গ্রামের নাম আমাদি। খুলনা শহর থেকে প্রায় ৪৮ কিঃ মিঃ দক্ষিণ-পশ্চিমে কপোতাক্ষ নদীর পাশে এই মসজিদটি অবস্থিত। খান-ই-জাহানের সময়ে মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। কালক্রমে এস্থানটি পরিত্যক্ত ও জঙ্গলাবৃত হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে জঙ্গল কেটে, মাটি খুঁড়ে মসজিদটিকে নতুনকরে আবিস্কার করা হয় বলে এ মসজিদের নাম হয় মসজিদ কুড় মসজিদ। সুন্দরবন অঞ্চলের এক অবিস্মরনীয় কীর্তি এই মসজিদ।এটি সুন্দরবনের একটি প্রধান স্থাপত্য নিদর্শন। ষাট গম্বুজ ও নয় মসজিদের সঙ্গে মসজিদ কুড় মসজিদটির গঠন প্রণালী ও স্থাপত্য কৌশলের যথেষ্ঠ মিল আছে। মসজিদটি খান-ই-জাহান কর্তৃক নির্মিত।
গ) সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক:
পর্যটন আকর্ষণের নাম ও বর্ণনা :
১. ব্রজলাল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ :
খুলনা জেলা শহর থেকে ৫ মাইল পশ্চিমে ভৈরব নদীর তীরে ব্যবসা কেন্দ্র দৌলতপুরে এটি অবস্থিত। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯০২ সালের জুলাই মাসে। প্রথমে এর নাম ছিল হিন্দু একাডেমী। ১৮১৬ সালে শিক্ষানুরাগী ও ত্যাগী পুরুষ বাবু ব্রজলাল এই একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৪ সালের ৮ অক্টোবর বাবু ব্রজলাল চক্রবর্তী মারা যান। ১৯৪৬ সালে তাঁর নামানুষারে এই প্রতিষ্ঠানের নাম হয় ব্রজলাল হিন্দু একাডেমী, পরবর্তীতে সংক্ষেপে বি, এল কলেজ নামকরণ করা হয়। ১৯৭৩ সালে এটি কলেজ বলে ঘোষিত হয়।
২. কবি গুরু রবীঠাকুরের শ্বশুরবাড়ী-দক্ষিণ ডিহি ফুলতলা :
খুলনা থেকে সড়কপথে ফুলতলা উপজেলা হয়ে দক্ষিণ ডিহি যেতে হয়, সড়কপথে এর দুরত্ব প্রায় ২৩ কিলোমিটার। ১.৪৩ হেক্টর জমির উপর এ বাড়ী। মূল ভবনটি দোতলা । স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য বিচারে ইটসুরকিতে তৈরী বলে ভবনটির তেমন কোন গুরুত্ব নেই। খ্রিষ্টপূর্ব ১৯৯৪ সালে এ বাড়ীর আঙ্গিনায় রবীন্দ্র কমপ্লেক্স উদ্বোধন করা হয়। রবীন্দ্রমঞ্চ, রবীন্দ্র ইনষ্টিটিউট, সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র, কবি ও তাঁর স্ত্রীর আবক্ষ ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়। এ বাড়ী আঙ্গিনায় বিস্তীর্ণ খোলা মাঠ এবং শত বছর বয়সের একটি গাছ রয়েছে।
৩. কবি কৃষ্ণ চন্দ্রের বাড়ী :
ভৈরব নদীর তীরে কবি কৃষ্ণ চন্দ্রের বাড়ী। এখানে বিরাজ করছে এক নির্জন পরিবেশ নিরিবিলি পরিবেশ। নির্জন নিরিবিলি জায়গায় পাখির কুজন। কবি কৃষ্ণ চন্দ্রের স্মৃতিস্তম্ভে কবির রচিত কবিতার দুটি লাইন লেখা রয়েছে, “ওহে মৃত্যু তুমি মোরে কি দেখাও ভয়, ও ভয়ে কম্পিত নয় আমার হৃদয়”। কবি কৃষ্ণ চন্দ্র মজুমদার দেীলতপুর থানার সেনহাটি গ্রামে ১৮৩৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং তার মৃত্যু হয় ১৯০৭ সালে। তিনি সাপ্তাহিক ”ঢাকা প্রকাশ ”সহ বেশ কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনের কাজ করেছেন। ”যে জন দিবসে মনের হরষে জ্বালায় মোমের বাতি” এবং ” চির সুখী জন ভ্রমে কি কখন ব্যাথিত বেদন বুঝিতে কি পারে” কবিতা দু’খানি লিখে কৃষ্ণচন্দ্র অমর হয়ে আছেন বাংলাকাব্যে।
ঘ) বিনোদন :
পর্যটন আকর্ষণের নাম ও বর্ণনা :
১. প্রেম কাণন:
প্রেম কানন খুলনার আরেক সৌন্দর্য্য। এখানে বৈচিত্রময় বনরাজি ঘেরা শান বাঁধানো পুকুরঘাটে ঝিরিঝিরি বাতাস মনকে দোলা দেয়। এখানে গাছের তৈরী মানুষ, বানর, ঘোড়া, হাতি, বাঘ, হরিণ, আরো অনেক কিছু দেখা যায়। গাছপালায় ঢাকা প্রেমকাণন ব্রিটিশ আমলে জোড়াগেটের বিশিষ্ঠ মাড়োয়ারী ব্যবসায়ী প্রেমসুখ মেহতা ও পান্নালাল মেহতা একটি বাগানবাড়ি তৈরী করেন। সেই বাগান বাড়িই এখনকার প্রেমকাণন।
ঙ) উৎসব সম্পর্কিত :
পর্যটন আকর্ষণের নাম ও বর্ণনা :
১. রাস মেলা :
দুবলার রাস পূর্ণিমার মেলা দক্ষিণ বাংলার সবচেয়ে বড় মিলনমেলা। প্রতি বছর হাজারো পূণ্যার্থী পশ্চিম দুবলার আলোর কোল নামক স্থানে চার দিনের এই আনন্দ-উৎসবে মিলিত হয়। মেলার আয়োজক হিন্দু সম্প্রদায় হলেও এই মেলা সর্বজনীন। হিন্দু, মুসলিম,বৌদ্ধ,খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকজন এই উৎসবে অংশ নেয়। এবং সেইসাথে দেখে নেয় প্রকৃতির অসাধারণ লীলাভূমি সুন্দরবন।
চ) প্রাকৃতিকঃ
পর্যটন আকর্ষণের নাম ও বর্ণনাঃ
১. সুন্দরবনঃ
পৃথীবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান পর্যটন অঞ্চল। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও জীববৈচিত্রের দিক থেকেও এই বনটি গুরুত্বপূর্ণ। মঙ্গলা বন্দরের অদুরেই সুন্দরবন। উল্লেখ্য যে, সুন্দরবনকে ১৯৯৭ সালে প্রাকৃতিক বিশ্ব ঐতিহ্য অঞ্চল ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশের গর্ব সুন্দরবনের আয়তন প্রায় ৬০০০ বর্গ কিলোমিটার। এই বনে ৩৩০ প্রজাতির গাছ, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪০০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রজাতির পাখি এবং ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী বাস করে। বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে ঘিরে আছে অনেক গল্প কাহিনী। বাৎসরিক দুবলার মেলা ও বনবিবির পূজার মত ঐতিহ্যবাহী উৎসবসমূহ আমাদের সুন্দরবনকে করেছে আরো শক্তিশালী। সুন্দরবনের নারিকেলডাঙ্গা, হারবাড়িয়া, জোরশিং, আংটিহীরা, শেখেরটেক, কালিরচর, চান্দেশ্বর, কৈখালী, মালঞ্চ, হরিণগর, কটকা, কচিখালী, নীলকমল (হিরন পয়েন্ট), করমজল. তিনকোনা ও দুবলারচর অন্যতম। মঙ্গলা থেকে করমজলের দুরত্ব ১০ কিঃমিঃ। এর অদুরে ঢাংমারী। সেখানে একটি ইকোপার্ক আছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ স্পট হলো হিরণ পয়েন্ট ও কটকা। এখানেও একটি ইকোপার্ক ও টাওয়ার রয়েছে। সুন্দরবনে যেতে মঙ্গলা থেকে ছয়-আট ঘন্টা সময় লাগে।এছাড়া সুন্দরবনের আরেক আকর্ষণ বাওয়ালী, মৌয়াল ও জেলে জীবনসহ হরিণ ও বানরের অবাধ বিচরণ। সুন্দরবনে ৩টি বিশ্বঐতিহ্য অঞ্চল রয়েছে যথাঃ টাইগার পয়েন্ট, হিরণ পয়েন্ট ও মান্দারবাড়ী। এই বনাঞ্চলে পর্যটকদের আকর্ষণ সবচাইতে বেশী।