Wellcome to National Portal
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ১২ জুলাই ২০২০

রাজশাহী জেলা

ক) ঐতিহাসিক, প্রত্নতাত্ত্বিক ও স্থাপত্য নিদর্শন :
পর্যটন আকর্ষণের নাম ও বর্ণনা :
 
১. পুঠিয়া রাজবাড়ি ও পুরাকীর্তি সমূহ ( গোবিন্দ মন্দির,শিব মন্দির, গোপাল মন্দির, দোলমঞ্চ ইত্যাদি) :
রাজশাহী জেলার সন্নিকটে পুঠিয়া উপজেলায় অবস্থিত। পুঠিয়া জমিদারি সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথমদিকে মুঘলদের সৃষ্ঠ বাংলার প্রাচীনতম জমিদার গুলির অন্যতম। জনশ্রুতি আছে যে, নীলাম্বর মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর এর নিকট থেকে ’রাজা’ উপাধি লাভ করেন। পুঠিয়ার রাজবাড়ি  ঐ এলাকার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। দোতলা রাজবাড়ি ভবনের সন্মুখে উত্তর দিকে খোলা প্রঙ্গণের অপর পার্শ্ব রয়েছে  ২০০ ফুট বিস্তৃত বিশাল পিরামিড আকৃতির চারতলা  মনোরম দোলমঞ্চ। ভবনের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে একই ধরনের দুটি সম্প্রসারিত অংশ এবং মধ্যবর্তী অংশে রয়েছে এক বিশাল তোরণ। রাণী হেমন্তকুমারী দেবী তার শাশুড়ি মহারানী শরঃসুন্দরী দেবীর সম্মানার্থে ১৮৯৫ সালে এ বিশাল প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। চারিদিকে পরিখাবেষ্ঠিত রাজবাড়ির এ বিশাল এলাকায় টেরাকোটা অলঙ্করণ সমৃদ্ধ বেশ কয়েকটি সুদৃশ্য মন্দির আছে। এদের মধ্যে রয়েছে পঞ্চরত্ন, গোবিন্দ মন্দির,ছোট দোচালা সুদৃশ্য মন্দির, কুঁড়েঘর আকৃতির জগদ্ধাত্রী মন্দির ও শিবমন্দির।
 
২. রথবাগিচাঃ
পুঠিয়ার চারআনি রাজা নরেশ নরায়ন  বাংলা ১২৯৩ সালের পর রাজপ্রাসাদ থেকে ২ কিলোমিটার দূরে তারাপুর নামক স্থানে চারদিকে ৩০ বিঘা বিশাল পুকুর খনন করে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা পূজা করার জন্য বিশাল জলরাশির মাঝে দৃষ্টিনন্দন ‘রথবাগিচা’ নামের এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন।
 
 
খ) ধর্মীয় :
 
পর্যটন আকর্ষণের নাম ও বর্ণনা :
 
১. বাঘা মসজিদ :
রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ৪৮ কিঃমিঃ দক্ষিণ-পূর্বে প্রখ্যাত বাঘা মসজিদ  অবস্থিত। রাজশাহী-ইশ্বরদী-ঢাকা মহাসড়ক সংলগ্ন বাঘা মসজিদ সুলতান নূসরাত শাহ ১৫২৩ খ্রীঃ নির্মাণ করেন। ইট ও পোড়ামাটির ট্যারাকোটায় বিভিন্ন লতাপাতা,ফুল ফল ইত্যাদি বিভিন্ন নকশা অলংকৃত এই অর্পূব মসজিদটি বাংলাদেশের একটি মূল্যবান ঐতিহাসিক নিদর্শন। বাঘা মসজিদ সংলগ্ন দীঘিতে  শীত মৌসুমে প্রচুর অতিথি পাখির আগমন ঘটে যা পর্যটকদের জন্য  বাড়তি আকর্ষণ। এছাড়া প্রতি শুক্রবার মসজিদ সংলগ্ন শাহ্ দৌলা (রঃ) এর মাজারে বিপুল সংখ্যক  ভক্তের আগমন ঘটে। ঈদের পরদিন হতে এখানে  সপ্তাহব্যপী মেলা বসে।
 
২. কিসমত মাড়িয়া মসজিদ :
অষ্টাদশ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত দুই গম্বুজবিশিষ্ঠ কিসমত মাড়িয়া মসজিদ।
 
৩. জাহানাবাদ সমাধি সৌধ :
রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ি  থানার জাহানাবাদ গ্রামে অবস্থিত। রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ৩২ কিঃমিঃ দূরে রাজশাহী-নবাবগঞ্জ সড়কের ডানদিকে সমাধিসৌধটি অবস্থিত। ইমারতটি এখন ভগ্ন দশায় রয়েছে। ইট নির্মিত বর্গাকার সমাধিসৌধটি প্রতিবাহুর দৈর্ঘ্য ৬মিটার। স্কুইঞ্চের উপর নিমির্ত একটি গম্বুজ দ্বারা সমাধিটি আচ্ছাদিত।এ সমাধিসৌধটি নির্মাতা কে বা কার জন্য এটি নির্মাণ করা হয়েছিল তা জানা যায়নি। দেখে মনে হয়, সমাধিটি কোন সুফি সাধকের এবং তিনি সম্ভবত শাহ সুলতানের একজন অনুসারী অথবা সহযোগী ছিলেন।
 
 
গ) সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক:
পর্যটন আকর্ষণের নাম ও বর্ণনা :
 
১. বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর :
বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ জাদুঘর গুলির মধ্যে একটি। এটি বরেন্দ্র রিসার্চ সোসাইটির একটি বড় অর্জন। বাংলার তৎকালীন গভর্ণর লর্ড কারমাইকেল ১৯১৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী ১১ নং প্রজ্ঞাপন দ্বারা স্থানীয় জাদুঘরগুলির সংগঠকদের প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং প্রদর্শনের অনুমতি দান করেন এবং ১৯১৬ সালের ১৩ নভেম্বর লর্ড কারমাইকেল জাদুঘর ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৬৪ সালের ১০ অক্টোবর আইন সম্মত উপায়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর পরিচালনার সকল দায়িত্ব গ্রহণ করে। বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে সংগ্রহের মধ্যে রয়েছে বহু মূল্যবান পাথর ও ধাতুনির্মিত ভাস্কর্য, খোদিত লিপি, মুদ্রা, মৃৎপাত্র ও পোড়ামাটির ফলক, অস্ত্রশস্ত্র, আরবি ও ফারসি দলিলপত্র, চিত্র, বইপত্র ও সাময়িকী এবং সংস্কৃত ও বাংলা পান্ডুলিপিসমূহ।  
 
২. রাজশাহী কলেজ :
দুলাহাটির রাজা হরলাল রায় বাহাদুরের আর্থিক সহযোগিতায় ১৮৭৩ সালে প্রতিষ্ঠার পরপরই এটি পূর্ববঙ্গ, উত্তরবঙ্গ, বিহার, পূর্ণিয়া এবং আসাম অঞ্চলের উচ্চশিক্ষার অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত হয়। ১৮৭৭ সালে  কলেজটি ডিগ্রি কোর্সের এবং ১৮৭৮ সালে বিএ কোর্সের  অনুমতি লাভ করে। বর্তমানে কলেজটিতে ১৯টি বিষয়ে অনার্স  কোর্স এবং ২১টি বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স পড়ানো হয়। কলেজের গ্রন্থাগারটি অনেক পুরানো বই, গেজেট,বিশ্বকোষ, পুঁথি,পান্ডুলিপি এবং পত্র-পত্রিকা দ্বারা সমৃদ্ধ।
 
৩. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় :
রাজশাহী শহর থেকে পাঁচ কিঃমিঃ পূর্বদিকে অবস্থিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে এই বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫৩-৫৪ শিক্ষবর্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্নে রাজশাহী কলেজের বেশ কয়েকজন স্বনামধন্য অধ্যাপক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবন ১৯৬৪ সালে নির্মিত হয়। এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রন্থাগার। খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় খুবই সক্রিয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে জাতীয় প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে এর ছাত্র ও শিক্ষকদের বিশেষ অবদান রয়েছে।
 
৪. রেশম কারখানা :
বাংলায় ঠিক কখন থেকে রেশম প্রস্তুত শুরু হয় এ-বিষযক কোন সঠিক  তথ্য জানা যায় নি। তবে এটা নিশ্চিত যে, একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ শিল্প এবং আন্তর্জাতিক  বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান উপকরণ হিসেবে এই রেশম তৈরি প্রক্রিয়ার ইতিহাস শুরু হয়েছিল বহু শতাব্দী আগেই। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ত্রয়োদশ শতাব্দীতে সুদূর ইতালিতে এই রেশম গাঙ্গেয় সিল্ক নামে পরিচিত ছিল। বাংলায় এত বেশী রেশম উৎপাদিত হতো যে তা স্থানীয় চাহিদা পূরণ করার পর প্রচুর পরিমাণে বিদেশ রপ্তানি হতো। এই সিল্কের বাজারই প্রথম ইউরোপীয় বণিকদের বাংলায় আসতে আকৃষ্ট করে। ১৮৭০ এর দশকে এক হিসেবে জানা যায়, রাজশাহীতে সিল্ক উৎপাদন থেকে প্রায় ২,৫০,০০০ লোকের কর্ম সংস্থান হতো। পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষ রেশম শিল্পের উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এর ফলে ১৯৬২ সালের মধ্যে সরকারী অর্থায়নে রাজশাহী সিল্ক ফ্যাক্টরি চালু হয়। স্বাধীনতার পর রেশম শিল্পের উন্নয়নের জন্য অধিকতর সুসংবদ্ধ নীতি গ্রহণ করা হয়। ফলে এ শিল্প বৈদেশিক সাহায্য এবং কারিগরি সহায়তা লাভ করে। ১৯৭৭ সালে সিল্ক খাতের কার্যক্রম সমন্বয়ের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সেরিকালচার বোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়।  রেশম শাড়ি  বাঙালি রমণীর ঐতিহ্যগত সৌন্দর্য্য এবং সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্রের প্রতীক। সিল্কের বিভিন্ন নমুনা এবং ডিজাইনের জন্য গরদ, মটকা, বেনারসি প্রভৃতি নামে পরিচিত।     
 
ঘ) উৎসব সম্পর্কিত :
পর্যটন আকর্ষণের নাম ও বর্ণনা :
 
১. শাহ মখদুম ওরশ ও মেলা :
চতুর্দশ শতাব্দীর একজন মুসলিম  দরবেশ, যিনি বরেন্দ্র অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করেছিলেন। শাহ মখদুমের প্রকৃত নাম ছিল আব্দুল কুদ্দুছ জালালুদ্দীন। তিনি ছিলেন হজরত আব্দুল কাদের জিলানীর (রঃ) পৌত্র আজলা শাহের পুত্র। প্রায় সিকি শতাব্দী ধরে শাহ মখদুম বরেন্দ্র অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করে ৭১৩ হিজরির (১৩১৩ খ্রিষ্টাব্দ) ২৭ রজব ইন্তেকাল করেন। প্রতিবছর ২৭ রজব তাঁর ওরশ পালিত হয়। দূর ও নিকটের ভক্তবৃন্দ প্রদীপ, মোমবাতি, চাল, মিষ্টান্ন, ফলমুল প্রভৃতি নিয়ে শিন্নি প্রদান করে। প্রতিবছর ১০ই মহররম শাহ মখদুমের দরগায় একটি মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ঐ দিন তাজিয়া বের করা হয় এবং লাঠি খেলা এবং নকল তলোয়ার দিয়ে যুদ্ধের মহড়া অনুষ্ঠিত হয়।
 
২. রথযাত্রা :
পুটিয়ার রাজবাড়ির সন্মুখে বিশাল উন্মুক্ত স্থানে রথযাত্রা উপলক্ষে দশদিনব্যাপী এই মেলা খুবই আনন্দ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় । এটি একটি হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলেও বর্তমানে তা সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। মেলা উপলক্ষে এই দশদিনে দুরদুরান্ত হতে লক্ষাধিক ক্রেতা-বিক্রেতার ও দর্শণার্থীর আগমন ঘটে।
 
৩. শিব মেলা :
বাংলা শ্রাবণ মাসের শেষ সোমবার পুঁটিয়া শিবমন্দির প্রাঙ্গনে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। জানা যায় যে, ভারত হতেও ধর্মপ্রাণ নারী-পুরুষ  এ মেলায় আগমন করে  থাকেন। বিভিন্ন ধরনের দেশীয়, লোকজ পণ্য, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পজাত পণ্যসামগ্রী ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় জিনিস এ মেলায় পাওয়া যায়।
 
৪. সোহরাই উৎসব :
সোহরাই উৎসব সাঁওতালদের একপ্রকার জাতীয উৎসব যা পৌষ সংক্রান্তির দিন গোদাগাড়ী উপজেলার সাঁওতাল পল্লীগুলোতে অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে উৎযাপিত হয়। ফসলের দেবতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নাচ-গান-বাদ্য আর ফুলের মনোরম শোভা এবং নানান আহার্য ও পানীয়ে উৎসব হয়ে ওঠে জমজমাট। এর আরেকটি বড় আর্কষর্ণ অপরূপ সাজে সজ্জিত সাঁওতাল তরুণ-তরুণীদের দলবদ্ধ নৃত্য।